বাংলাদেশে দু'টি কৃষ্ণ কালাচ বা কালকেউটে প্রজাতি পাওয়া যায়, ছোট কৃষ্ণ কালাচ ও বড় কৃষ্ণ কালাচ।
বড় কৃষ্ণ কালাচ
বড় কৃষ্ণ কালাচের (Greater Black Krait) বৈজ্ঞানিক নাম Bungarus niger। এলাপিডি পরিবারভূক্ত এই সাপটি দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ, নেপাল, ভারতের সামান্য কিছু অংশ (আসাম, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, মণিপুর প্রভৃতি) ও ভূটানে এন্ডেমিক। আঞ্চলিকভাবে এরা ভীমরাজ, বেছার, কালান্তর ইত্যাদি নামেও পরিচিত। এই প্রজাতিটির প্রথম বর্ণনা দার্জিলিং থেকে সংগ্রহ করেন বিখ্যাত ফিজিশিয়ান ও সরীসৃপবিদ Frank Wall।
এটির দৈর্ঘ্য ও আকার মাঝারি ধরনের, সাধারণত ০.৮০ মিটার লম্বা হয়ে থাকে (তবে সর্বোচ্চ ১.৩০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে)। দেহ সরু আকৃতির, মাথা আকারে একটু বড় ও ঘাড় থেকে পৃথকযোগ্য। সারা দেহে কোনো প্যাটার্ন নেই, উজ্জ্বল নীলাভ-কালো বা গাঢ় চকোলেট বাদামী রঙের, কিন্তু পুরো পেটের দিকটা সাদা।
বড় কৃষ্ণ কালাচকে ছোট কৃষ্ণ কালাচ থেকে পৃথক করাটা বেশ দুষ্কর। তবে তাদের ভৌগোলিক বিস্তৃতি ও মেরুদণ্ডের আঁইশগুলো দেখে সহজে পৃথক করা যায়।
বড় কৃষ্ণ কালাচ বাংলাদেশের সিলেট ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের বাসিন্দা, তবে সচরাচর দেখা যায় না, খুবই বিরল প্রজাতির সাপ (এছাড়াও ময়মনসিংহ বিভাগে পুরোনো রেকর্ড ও পঞ্চগড়ে সাম্প্রতিক সময়ে একটি রেকর্ড পাওয়া গিয়েছে) । ছোট কৃষ্ণ কালাচকে সিলেট ও চট্টগ্রাম বাদে প্রায় সর্বত্রই পাওয়া যায়, বিশেষকরে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে।
বড় কৃষ্ণ কালাচের পিঠ বরাবর স্পষ্ট ও বড় আকারের ষড়ভুজাকৃতি (Hexagonal) আঁশের সারি থাকে, যেটা ছোট কৃষ্ণ কালাচে আকারে ছোট হয়।
![]() |
ছবি : বড় কৃষ্ণ কালাচ ( Samuel lalronuga) |
বড় কৃষ্ণ কালাচের কামড়ানোর রেকর্ড খুবই কম। তবে অন্যান্য ক্রেইটদের মতো যেহেতু এরা আলোর প্রতি সংবেদনশীল, তাই তাদের উপরে আলো ফেললে দেহকে কুন্ডলী পাকিয়ে মাথাটাকে লুকিয়ে রাখতে চায়। এরা আচরণে নিশাচর ( Nocturnal), অর্থাৎ রাতে সক্রিয় থাকে। চোখগুলো খুবই ছোট ও দেহের মতো কালো, চোখের মণিও কালো যা তাদেরকে নিশাচর প্রাণী হিসেবে চলাফেরা করতে সাহায্য করে (এজন্য রাতে এতো সহজে চোখে পড়েনা)। এরা অত্যন্ত চঞ্চল ও ক্ষিপ্র স্বভাবের সাপ। ভয় পেলে কিংবা বিপদের আভাস পেলে দ্রত পালিয়ে যায়।
এদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে ইঁদুর ও ইঁদুরজাতীয় স্তন্যপায়ী প্রাণী, অন্যান্য প্রজাতির সাপ, বিভিন্ন প্রজাতির টিকটিকি ও গিরগিটি, ব্যাঙ, মাছ প্রভৃতি।
প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত। মিলনের কিছুদিন পরে স্ত্রী সাপ ৮-১০টি ডিম পাড়ে (Oviparous)।
যদিও বড় কালকেউটের কামড়ানোর রেকর্ড পাওয়া দুষ্কর, কিন্তু এরা তীব্র ও শক্তিশালী নিউরোটক্সিন বিষধর, পাশাপাশি কিছু মায়োটক্সিনও ধারণ করে । বেশি বিরক্ত করলে কিংবা এরা ভয় পেলে কামড় বসিয়ে দিবে। অন্যান্য ক্রেইটদের মতো এরাও বিষহীন কামড় (Dry Bite) দেয়না, সবগুলো কামড়েই মারণ মাত্রার বিষ ঢালে।
এদের বিষদাতগুলো ছোট হওয়ায় কামড়ের স্থানে তেমন কোনো চিহ্ন থাকেনা, পাশাপাশি নিউরোটক্সিন বিষধর হওয়ায় কামড়ের জায়গাটা অবশ হয়ে থাকে, ফলে বুঝাই যায়না সাপের কামড় নাকি মশার কামড়। তবে এগুলোর বিষক্রিয়ার লক্ষণ একবার প্রকাশ পেলে রোগীকে সাধারণত বাঁচানো যায়না।
এদের কামড়ের (নিউরোটক্সিন বিষের) লক্ষণগুলো হতে পারে -
- চোখে সবকিছু ঝাপসা ঝাপসা দেখা (Double vision / Blurred Vision), চোখের পাতা পড়ে আসা (Ptosis)
- ঘুম ঘুম ভাব বা তন্দ্রাচ্ছন্নতা (Drowsiness)
- দেহে প্যারাইলাইসিস ঘঠা (Paralysis)
- কথা বলতে কষ্ট হওয়া, উল্টাপাল্টা কথাবার্তা বলা, স্পষ্টভাবে বোঝা যায় না এমন কথাবার্তা বলা (Slurred Speech / Dysarthria)
- অজ্ঞান হয়ে যাওয়া (Unconsciousness)
- কামড়ের আশেপাশের জায়গার কোষগুলোর মৃত্যু ঘঠা (যাকে Necrosis বলা হয়) ইত্যাদি।

0 Comments