Advertisement

মিঠাপানির কুমির (Marsh Crocodile)

মিঠাপানির কুমিরকে ইংরেজীতে Mugger Crocodile / Marsh Crocodile বলা হয়, এরা Crocodylidae পরিবারভূক্ত আরেকটি বৃহদাকৃতির সরীসৃপ যাদের বৈজ্ঞানিক নাম Crocodylus palustris

একটি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ কুমির দৈর্ঘ্যে সাধারণত ৩–৪.৫ মিটার হয় (সর্বোচ্চ প্রায় ৫ মিটার) ও ওজন হতে পারে ২০০–৪৫০ কেজি পর্যন্ত। দেহ মোটাসোটা ধরনের , চওড়া মুখ এবং অপেক্ষাকৃত খাটো চোয়াল হয়ে থাকে । এদের চওড়া মুখ তাদেরকে শনাক্ত করার অন্যতম বৈশিষ্ট্য (লোনাপানির কুমিরের মুখ লম্বা হয়)। লেজ মোটা এবং শক্তিশালী, যা দ্রুতগতিতে সাঁতার কাটতে সাহায্য করে।

মিঠাপানির কুমিরদের দেহের রং সাধারণত গাঢ় বাদামি বা জলপাই-সবুজ (olive-brown) হয়ে থাকে। পিঠে ও লেজে গাঢ় ছোপ বা দাগ থাকে, চামড়া মোটা ও শক্ত আইশে পূর্ণ। চোখের পেছনে থাকে একটি উঁচু কুঁজ । মিঠাপানির কুমিরের চোয়ালের উপর, চোখের সম্মুখপ্রান্তে কোনো চূড়া নেই, চোয়াল অপেক্ষাকৃত খাটো।


ছবি : মিঠাপানির কুমির ( Biolib)

এরা সাধারণত মিঠাপানির পরিবেশে বসবাস করে: নদী, বিল, খাল, হ্রদ, জলাধার এবং জলকুণ্ডে দেখা যায়। পানির ধারে শুষ্ক স্থানে রোদ পোহায় (Sun Basking)। লম্বা লেজ এবং পদচ্ছাপ ব্যবহার করে দ্রুত সাঁতার কাটে ও শিকারের উপর আক্রমণ করে। এদেরকে গাছপালা ও ঝোপঝাড়পূর্ণ জলাশয়ের ধারে বেশি দেখা যায়। তবে, পানির বাইরে (ডাঙায়) দীর্ঘ সময় কাটাতে পারে।

ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে এদের জীবভৌগলিক বিস্তৃতি সীমাবদ্ধ। বাংলাদেশে সুন্দরবনের পারিপার্শ্বিক এলাকায় দেখা যেত, বর্তমানে এদের অবস্থা খুবই খারাপ, বন্য পরিবেশে প্রায় বিলুপ্তির পথে (তবে আশার আলো হলো, এখন অনেক ফটোগ্রাফাররা এটির নিয়মিত দেখা পাচ্ছেন)।

সব কুমিরের মতো এরাও মাংসাশী (carnivorous), মাছ, ব্যাঙ, পাখি, ছোট ছোট স্তন্যপায়ী, কচ্ছপ, এমনকি বড় বড় গবাদিপশুকেও শিকার করতে পারে। প্রাপ্তবয়স্ক কুমির মাঝেমধ্যে মানুষকেও আক্রমণ করতে পারে।

প্রজনন মৌসুম শীতকালে (নভেম্বর–ফেব্রুয়ারি), স্ত্রী কুমির সাধারণত বালির গর্তে ২৫–৩০টি ডিম পাড়ে। ডিম ফোটে প্রায় ৬০–৭৫ দিনে। মা কুমির ডিম পাহারা দেয় এবং বাচ্চা বের হলে মুখে করে পানিতে নিয়ে যায়। বাচ্চা জন্মের পরও কিছুদিন মা কুমির তাদের রক্ষা করে।

মানুষের জন্য মিঠাপানির কুমির মাঝে মধ্যে বিপজ্জনক হতে পারে। বিশেষকরে, কৃষিজমি, মৎস্য চাষ এবং পানির উৎসের কাছাকাছি দেখা দিলে সংঘাত ঘটে।

বাসস্থান ধ্বংস, শিকার, পানিদূষণ এবং মানব-কুমির সংঘাত (Human-crocodile Conflicts) এদের টিকে থাকার প্রধান হুমকি।

Crocodylus palustris আমাদের পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ শিকারি প্রাণী। এটি জলজ পরিবেশের খাদ্য শৃঙ্খলার ভারসাম্য রক্ষা করে। মানুষের সাথে শান্ত সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হলে সংরক্ষণ, সচেতনতা এবং আবাসস্থল রক্ষা একান্ত প্রয়োজন।

Post a Comment

0 Comments