Advertisement

সাপ কি দুধ পান করে? (Do Snake Drinks Milk?)

মানুষের সাথে সাপের সম্পর্ক খুব বেশি দূরবর্তী নয়, সামাজিকভাবে হোক আর ধর্মীয়ভাবে, সাপের সঙ্গে মানুষের জানাশোনা আর পরিচিতি সেই প্রাচীনকাল থেকেই। সাপকে নিয়ে আমাদের মনে যেরকম ভীতি কাজ করে,ঠিক তেমনি সাপের হাত থেকে বাঁচার উপায় অন্বেষনে আমাদের মনে অনেক কৌতূহল তৈরী হয়।আর এসব কৌতূহল থেকেই সাপ সম্পর্কে আমাদের মাঝে তৈরী হয়েছে নানারকম অদ্ভুত সব কুসংস্কার আর অবৈজ্ঞানিক তত্ত্ব যা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আমাদের গ্রামীন জনগোষ্ঠীর মাঝে। আজ এরকমই একটি বহুল প্রচলিত কুসংস্কার নিয়ে আলোচনা করবো - সেটা হচ্ছে সাপ দুধ খায়।

প্রথমত, সাপ হচ্ছে কর্ডাটা (Chordata) পর্বের সরীসৃপ (Reptilia) শ্রেণীর একটি প্রাণী যারা বুকে ভর দিয়ে চলে এবং এরা মাংসাশী (carnivores) প্রাণী।আর দুধ সরীসৃপদের খাদ্য নয়। সুতরাং সাপদের খাদ্য তালিকায় দুধের অস্তিত্ব থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া আধুনিক বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে সাপের দুধ খাওয়া অসম্ভব।

দুধের একটি অন্যতম উপাদান হলো - ল্যাক্টোজ যা একটি ডাই-স্যাকারাইড শর্করা (Carbohydrate)।যেসব প্রাণী দুধ হজম করতে পারে তাদের অন্ত্রে ল্যাক্টেজ (Lactase) নামক এক প্রকার এনজাইম থাকে যা এই ডাই-স্যাকারাইডকে ভেঙে গ্লুকোজ এবং গ্যালাক্টোজ নামক দুটি মনোস্যাকারাইডে পরিণত করে। আমাদের ক্ষুদ্রান্ত্রের আন্ত্রিক রসে এই এনজাইম থাকায় আমরাও দুধ হজম করতে পারি।কিন্তু সাপের পৌষ্টিকতন্ত্রে এমন কোনো এনজাইমের অস্তিত্ব না থাকায় সাপের পক্ষে দুধ হজম করা অসম্ভব। অনেকক্ষেত্রে দুধ সাপের জন্য বিষ হিসেবে ক্রিয়া করতে পারে,তাই সাপ দুধ খেয়ে ফেললে তাকে বমি করে ফেলে দিতে হবে,অন্যথায় সাপ মারাও যেতে পারে।


ছবি : ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত 

আমাদের গ্রামাঞ্চলে আরেকটি মিথ প্রচলিত আছে যে সাপ নাকি গরুর স্তন থেকে দুধ খায়। এক্ষেত্রে দোষ চাপানো হয় নির্বিষ সাপ দুধরাজ এর উপর। দাবীটা নিসন্দেহে মিথ্যা, কারণ

প্রথমত, সাপের জিহ্বা দুইভাগে বিভক্ত (forked tongue)। আর এইরকম জিহ্বার গঠন থাকার কারণে সাপের পক্ষে গরুর স্তন থেকে দুধ চুষে খাওয়া সম্ভব নয়।

দ্বিতীয়ত, কোনো তরল চুষে খেতে হলে মুখের এবং বুকের চাপ হঠাৎ করে কমিয়ে ফেলতে হয়। এই চাপ কমে যাওয়ার ফলে বাহিরের তরল পদার্থ বায়ুমণ্ডলের চাপে মুখের ভেতর চলে আসে। আমাদের ক্ষেত্রে বক্ষগহ্বর ও উদরগহ্বর পৃথককারী মধ্যচ্ছদা (Diaphragm) নামে একটি পর্দা থাকে যা হঠাৎ নীচের দিকে নেমে গিয়ে বুকের ভেতর চাপকে অনেকটা কমিয়ে ফেলে। যার কারণে আমরা তরল পদার্থকে চুষে পান করতে পারি।কিন্তু সাপের কোনো মধ্যচ্ছদা নেই। তাই সাপের ক্ষেত্রে বুকের ভেতর চাপ হঠাৎ কমিয়ে ফেলা সম্ভব না। তাই সাপের ক্ষেত্রে কোনো তরল পদার্থ চুষে খাওয়া সম্ভব নয়।

তাছাড়া সাপের ঠোঁট থাকে না এবং এতে তারা দুধ ধরে রাখতে পারে না।তাই সাপের গরুর স্তন থেকে দুধ খাওয়ার বিষয়টি মিথ্যা

এখানে আরেকটি বিষয় সম্পর্কে বলে রাখা ভালো হিন্দু ধর্মের অনুসারীরা নাগপঞ্চমী নামক উৎসবে সাপকে দুধ খাইয়ে পূজা করে থাকে। এসময় অনেক জায়গাতে দেখা যায় সাপ দুধ পান করে।আবার সাপকে খেলা দেখানো ব্যক্তিরাও সাপকে দুধ পান করিয়ে থাকে। এটা কি অলৌকিক বা ঐশ্বরিক কিছু? আসলে ব্যাপারটা এরকম কিছু না।এর আসল কারণ হলো -

সাপকে দীর্ঘদিন পানি না পান করালে যে কোনো ধরণের তরল পদার্থ পান করতে দিলে সাপ সেটাই পান করবে।কারণ সাপের বর্ণ ও গন্ধ নির্ধারণ করার ক্ষমতা নেই। সাপকে দুধ খাওয়ানোর জন্য সাধারণত এই পদ্ধতিই অবলম্বন করে সাপের খেলা দেখানো আর পূজায় সাপকে দুধ খাওয়ানো ব্যক্তিরা।

তারা সাপকে কিছু না খাইয়ে বা পানি পান না করিয়ে কয়েকদিন পর্যন্ত রেখে দেয়।তাই সাপ খুবই তৃষ্ণার্ত থাকে।কয়েকদিন পরে যখন সাপের সামনে দুধ রাখা হয়,তখন তা দুধ, অ্যালকোহল কিংবা বেনজিনও হোক না কেন তৃষ্ণার্ত সাপ তা পান করবে।

Post a Comment

0 Comments