Advertisement

বিষধর সাপে কামড়ালে কী করা উচিত? (What Should be done if bitten by a Venomous Snake?)

 বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ধারণা অনুযায়ী প্রতি বছর পৃথিবীতে প্রায় ৫৪ লক্ষ মানুষ সাপের কামড়ের শিকার হন।যার মধ্যে প্রায় ২৭ লক্ষের মতো মানুষ শিকার হন নির্বিষ সাপ দ্বারা এবং প্রতি বছর পৃথিবীতে প্রায় ৮১ হাজার থেকে ১.৩৮ লাখ মানুষ মারা যান বিভিন্ন বিষধর প্রজাতির সাপের কামড়ে।

বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে Directorate General of Health Services (DGHS) এবং World Health Organization (WHO) এর যৌথ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৭ লক্ষ মানুষ সাপের কামড়ের শিকার হন, এদের মধ্যে প্রতি বছরে প্রায় ৬০০০ জন মানুষ মারা যায়। 

 সাপের কামড়ে মৃত্যুর ঘঠনা বাংলাদেশে অহরহ ঘঠে থাকে এবং এই সংখ্যা এতো বেশি হবার সবচেয়ে বড় কারণ হলো সাপ সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতনতা না থাকা।

সাপে কামড়ানো ব্যক্তিকে যথাযথ চিকিৎসা না দিয়ে বিভিন্ন অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করা,ওঝা দ্বারা ঝাড়ফুঁক দেয়া,বিভিন্ন গাছগাছালির দ্বারা চিকিৎসা করা, যথাসময়ে হাসপাতালে উপস্থিত না হওয়া মৃত্যুর হার বাড়ানোর মূল কারণ হিসেবে ধরা হয়।

বিষধর সাপে কাটার লক্ষণসমূহ -

কাউকে বিষধর সাপে কামড়ালে শরীরে বিষক্রিয়ার কিছু লক্ষণ দেখা যায়। যেমন: আক্রান্তস্থানে দুটি বিষদাঁতের কামড়ের চিহ্ন দেখা যায়, আক্রান্তস্থানসহ সারা শরীরে প্রচন্ড ব্যথা অনুভূত হতে থাকে, আক্রান্তস্থান থেকে অনবরত রক্ত ক্ষরণ হতে থাকে (প্রধানত হেমোটক্সিন বিষধারী সাপে কাটলে)। বমি অথবা বমি বমি ভাব হবে। জায়গাটি অস্বাভাবিকভাবে ফুলে ওঠে এবং কখনো কখনো সারা শরীর ফুলে যাওয়া, চোখে সবকিছু ঝাপসা ঝাপসা দেখবে,স্মৃতিশক্তি লুপ পেতে থাকবে,রোগী প্যারালাইজড হবে (প্রধানত নিউরোটক্সিন বিষধারী সাপে কাটলে)।চোখের পাতা বন্ধ হয়ে আসবে। খাবার ও ঢোক গিলতে অসুবিধা হবে, শ্বাসকষ্ট হবে, হাত-পা অবশ হয়ে আসবে ও অচেতন হয়ে পড়ে থাকবে, ঘাড় সোজা রাখতে পারবে না, প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাবে এবং ধীরে ধীরে মৃত্যুমুখে পতিত হবে।

তবে অনেক ক্ষেত্রে এসব লক্ষণ দেখা নাও দিতে পারে।যেমন : কালাচ (Common krait) সাপে কাউকে কাটলে এসব লক্ষণ প্রকাশ পায় না,তাই সাপের কামড়ের সন্দেহ হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরী।

 এখন আসা যাক কাউকে সাপে কাটলে কী করা উচিত? 

কেউ যদি অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে কোনো সাপের কামড়ের শিকার হন,তবে প্রথমেই নিজেকে যতটুকু সম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে। কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ছোবল মারা সাপটি নির্বিষ হয়।

এমনকি অনেক মারাত্মক আর তীব্র বিষধর সাপও ( চন্দ্রবোড়া, খৈয়া গোখরা,পদ্ম গোখরা ইত্যাদি) সবসময় কামড়ে বিষ ঢালে না যাকে ড্রাই বাইট বলে (কালাচ ব্যতিক্রম)। বিষধর প্রজাতির সাপে কামড়ালেও হাসপাতালে যাওয়ার মতো সময় হাতে থাকে (অন্তত ১০০ মিনিট থাকে)। নিজেকে শান্ত না রাখলে হার্ট দ্রুত বিট করবে,এতে বিষ সারা শরীরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে।তাছাড়া অতিরিক্ত ভয়ে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাও থাকে।মনে রাখবেন,বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে এন্টি-ভেনম মজুদ আছে।তাই কাউকে সাপে কামড়ালে কখনোই ভয় পাওয়া যাবে না।



কাউকে সাপে কামড়ালে যতদ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। কাপড় বাঁধা, কেটে কিংবা মুখ দিয়ে চুষে বিষ বের করার মতো ফালতু কাজে কখনোই সময় নষ্ট করা যাবে না।

ওঝার কাছে গিয়ে কারো মূল্যবান জীবনটাকে ধ্বংস করে দিবেন না। মনে রাখবেন,ওঝা কখনোই বিষকে নিস্ক্রিয় করতে পারবে না কিংবা বিষধর সাপের বিষ নামাতে পারবে না।এদের পুরোটাই ভন্ডামী আর ভাঁওতাবাজি। 

দড়ি কিংবা কাপড় যদি বাধতেই হয়, তবে তা দিয়ে খুব শক্ত করে বাঁধা যাবে না,এতে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে অঙ্গহানিও ঘটতে পারে।

সাপে কাটার স্থানে গোবর,ভেষজ ঔষধ, শিমের বিচি, আলকাতরা বা কোনো প্রকার রাসায়নিক পদার্থ লাগানো থেকে বিরত থাকতে হবে।

সাপটাকে চিনে রাখলে পারলে খুবই ভালো,কিন্তু না চিনতে পারলে সাপ চিনতে গিয়ে অযথা সময় নষ্ট করা যাবে না।

ছোবল মারা সাপটি কি নির্বিষ না-কি বিষধর তা কামড়ের স্থান দেখে নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না। 

আক্রান্ত স্থানকে যতটুকু সম্ভব কম নাড়াচাড়া করা,কারণ যত বেশি নাড়াচাড়া করবেন, বিষ তত দ্রুত ছড়াবে।

রোগিকে হাটাহাটি কিংবা দ্রুত শরীর নাড়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে। 

শরীরে কোনো হাতঘড়ি /তাবিজ/ব্রেসলেট ইত্যাদি থাকলে তা খুলে ফেলতে হবে।

মনে রাখবেন, সাপের কামড়ের একমাত্র চিকিৎসা এন্টি-ভেনম। সুতরাং অযথা কোনো ভেষজ উদ্ভিদ কিংবা এর রস/পাতা দিয়ে চিকিৎসা করতে যাবেন না।

নির্বিষ সাপে কাটলে -

নির্বিষ সাপে যদিও কোনো বিষ নেই,তবুও অনেক নির্বিষ সাপে কাটলে তীব্র জ্বালাযন্ত্রণা হতে পারে।সেক্ষেত্রে আক্রান্ত স্থান জীবাণুনাশক সাবান বা কোনো রাসায়নিক দ্বারা ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।ব্যাথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ সেবন করতে পারেন।তবে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া সবচেয়ে ভালো।

Post a Comment

0 Comments