Advertisement

পাতি কালাচ (Common Krait)

পাতি কালাচের (Common krait) বৈজ্ঞানিক নাম Bungarus caeruleus । এটিকে স্থানভেদে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়, যেমনঃ পাতি কাল কেউটে, কালচিতি, শিয়রচাঁদা, নিয়রচাঁদা, ঘামচাটা, ডোমনাচিতি, শাঁখাচিতি ইত্যাদি। 

এটিকে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, শ্রীলংকা, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, চীন, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, নেপাল প্রভৃতি দেশে দেখা যায় । এটি এলাপিডি পরিবারের মারাত্মক নিউরোটক্সিন বিষ সমৃদ্ধ সাপ। এটির বিষের SCLD50 এর মান 0.325 মিলিগ্রাম /কেজি। 

পাতি কালাচ সাধারণত ৩ ফুট লম্বা হয়ে থাকে। এদের মাথা সরু ও বেলনাকৃতির দেহের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ । লেজ ছোট ও গোল। এদের ঘাড় খুবই ছোট হয়, তবে ঘাড়ে প্রচুর শক্তি থাকে, পুরো শরীর কালো এবং সাদা সাদা পট্রি বা ব্যান্ডে ভরপুর। এই ব্যান্ডগুলো ঘাড়ের একটু পর থেকে শুরু হয়ে লেজের শেষভাগ পর্যন্ত চলে গেছে। পাতি কালাচের দেহের ব্যান্ডগুলো ২:২ এই আনুপাতিকহারে, অর্থাৎ ব্যান্ডগুলো জোড়ায় জোড়ায় থাকে যা দিয়ে এদেরকে ওয়াল'স ক্রেইট থেকে পৃথক করা যায়। তাছাড়া কমন ক্রেইটদের দেহে ২০-২২ জোড়ার মতো ব্যান্ড থাকতে পারে, অন্যদিকে ওয়াল'স ক্রেইটদের ক্ষেত্রে সেটা ৪০+ হতে পারে।

পাতি কালাচ সাপকে বলা হয় " নিরব ঘাতক (Silet killer) " । কারণ অন্যান্য সাপের মতো কালাচদের কামড়ের সাথে সাথে লক্ষণ প্রকাশ পায় না। কালাচের বিষদাঁতগুলো অনেক ছোট হওয়ায় কামড়ের স্থানে তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো বিষ দাঁতের চিহ্ন প্রকাশ পায় না এবং নার্ভবিষ (নিউরোটক্সিন) জায়গাটাকে অসাড় করে দেয় ফলে তেমন ব্যাথাও করে না। ফলস্বরূপ রোগী মৃত্যুর আগে বুঝতে পারে তাকে সাপে কামড়িয়েছে (কারণ ক্রেইটদের কামড়ে বিষক্রিয়ার লক্ষণ প্রকাশ পেলে রোগীকে সাধারণত বাঁচানো যায় না)।


ছবি : পাতি কালাচ (PC : Wikipedia) 

বাংলাদেশের সর্বত্র এই সাপকে দেখা যায় না। সিলেট ও চট্টগ্রামে এর কোনো রেকর্ড পাওয়া যায়নি, তবে উত্তরবঙ্গের মতো শুষ্ক অঞ্চলে এদের বিস্তৃতি ব্যাপক। অন্যান্য ক্রেইটদের মতো এরাও নিশাচর (Nocturnal),  তাই সাধারণত রাতের বেলায় মানুষকে কামড়ায়। এরা মানুষের বসতবাড়ির আশেপাশেই চলাফেরা করে এমনকি উষ্ণতার খুঁজে মানুষের খাটের উপরেও চলে আসতে পারে। এজন্য রাতের বেলায় মানুষের বিছানায় উঠে কামড় দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার মতো ঘঠনাও ঘঠে।

সাধারণত পাতি কালাচসহ সব ক্রেইটদের কামড়েই শতভাগ বিষ থাকে, যেখানে কোবরা ও ভাইপাররা বেশ কয়েক শতাংশ নির্বিষ কামড় (ড্রাই বাইট) দিয়ে থাকে।

এখন আসা যাক কীভাবে বুঝবেন কাউকে পাতি কালাচ কামড়িয়েছে? 

পাতি কালাচে কামড়ানোর ১-১.৫ ঘন্টার মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় । নিম্নোক্ত লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় -

  • অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভোরবেলায় প্রচণ্ড তলপেট ব্যথা নিয়ে ঘুম থেকে রোগী উঠে।
  • রোগীর চোখের পাতা পড়ে আসে, বমি বমি ভাব হয়, জ্বরের মতো শরীরে অশান্তি অনুভূত হয়।
  • মুখ থেকে লালা নিঃসরণ হয়।গলায় ব্যাথা অনুভূত হয়।
  • ঢোক গিলতে কষ্ট হয়।
  •  হাত-পায়ের গাঁটে গাঁটে ব্যাথা অনুভূত হয়।

পরিশেষে বলা যায়, পাতি কালাচের কামড়ের একমাত্র ঔষধ হলো " এভিএস "। ওঝা কখনোই সাপের বিষকে নিস্ক্রিয় করতে পারেনা। তাই পাতি কালাচসহ যেকোনো সাপে কামড়ানো রোগীকে যতদ্রুত সম্ভব নিকটস্থ সদর হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

Post a Comment

0 Comments