Advertisement

বিষাক্ত এবং বিষধর এর মধ্যে পার্থক্য (Distinction Between Poisonous and Venomous)

  দৈনন্দিন জীবনে আমরা " বিষ " শব্দটিকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে থাকি।কিন্তু আমরা বেশিরভাগ সময়ই যে ভূলটি করে থাকি, তা হলো " বিষাক্ত " এবং " বিষধর " শব্দদ্বয়ের মধ্যে পার্থক্য করতে পারিনা।দুটোকেই একসাথে গুলিয়ে ফেলি।আসলে বিষাক্ত এবং বিষধর শব্দ দুটির মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে।

বিষাক্ত : বিষাক্ত শব্দটি দ্বারা বোঝানো হয়, কোনো কিছু বিষযুক্ত অথবা কোনোকিছুতে বিষ রয়েছে এমন।বিষাক্ত পদার্থের প্রতিটি কণাই বিষাক্ত, প্রতিটি কণাই প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর।বিষাক্ত পদার্থকে সাধারণত রক্তের সাথে মিশে গিয়ে বিষক্রিয়া শুরু করার প্রয়োজন পড়ে না।এটিকে কোনো প্রাণী খাদ্য হিসেবে গ্রহন করলেই অথবা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে এটি কোনো প্রাণীর অভ্যন্তরে প্রবেশ করলেই এর কার্যক্রম শুরু হয়।উদাহরণ হিসেবে বলা যায় পটাশিয়াম সায়ানাইড, নাইট্রিক অক্সাইড, লেড ইত্যাদি পদার্থগুলো বিষাক্ত পদার্থ।

বিষধর : বিষধর বলতে বুঝায় এমন কিছু যা বিষ ধারণ করেছে কিন্তু সে নিজে বিষাক্ত নয়।অর্থাৎ সে অন্য প্রাণীর দেহে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করাতে পারবে,কিন্তু সে নিজে বিষাক্ত নয়। যেমন: রাসেল'স ভাইপার,গোখরা,কেউটে ইত্যাদি।

ইংরেজিতে Venom আর Poison শব্দ দুটির মধ্যে পার্থক্যও সুস্পষ্ট। যেমন: এদের সংজ্ঞা ঠিক এভাবে দেয়া হয় -

" If you bite something and you die, you die because of Poison " এবং " If something bites you and you die, you die because of Venom "

এই সংজ্ঞা থেকে Venomous (বিষধর) আর Poisonous (বিষাক্ত) এর পার্থক্য স্পষ্টভাবে বুঝা যায়

সবসময়ই মনে রাখতে হবে Venom হচ্ছে এমন বিষ যা শরীরে ঢুকাতে হয় এবং যা শরীরের রক্তে মিশে গিয়ে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে।বিভিন্ন প্রকার ভেনম রয়েছে যেমন: নিউরোটক্সিন (প্রাণীদের স্নায়ূতন্ত্রকে আক্রমণ করে), হেমোটক্সিন (লোহিত রক্ত কণিকাকে আক্রমণ করে),সাইটোটক্সিন(দেহকোষে আক্রমণ করে),মায়োটক্সিন (মাংসপেশিতে আক্রমণ করে),কার্ডিওটক্সিন (হৃদপিণ্ডকে আক্রমণ করে),নেফ্রোটক্সিন (কিডনিতে আক্রমণ করে) ইত্যাদি।


ছবি : বিষধর সাপ (Pixabay)


এখন আরেকটি প্রশ্নে আসা যাক,সাপকে কি বিষাক্ত বলতে হবে না-কি বিষধর বলতে হবে?

উত্তর এতক্ষণে পেয়ে যাবার কথা। সাপকে আমরা বিষধর বলবো,কারন সাপ বিষ ধারণকারী,তার শরীর বিষাক্ত নয় (*)

আরেকটি মজার প্রশ্ন হলো- কেউ যদি Venom অথবা Poison খেয়ে ফেলে তবে কোনক্ষেত্রে বেশি ক্ষতি হবে?

এর উত্তর হচ্ছে " Poison ". কারণ বিষ (Poison) আমাদের শরীররে ভিতরে প্রবেশ করলেই বিষক্রিয়া শুরু হবে,কিন্তু বিষ (Venom) যেহেতু রক্তে মিশার প্রয়োজন হয়,তাই যতটুকু পরিমান Poison খেলে কেউ মারা যাবে ততটুকু পরিমান Venom খেলে কেউ মারা নাও যেতে পারে।এর সায়েন্টিফিক ব্যাখা হলো -

মানুষের রক্ত সংবহনতন্ত্র বদ্ব প্রকৃতির অর্থাৎ রক্ত সবসময়ই রক্তনালীসমূহের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে,কখনো দেহগহব্বরে উন্মুক্ত হয় না। এজন্য কেউ Venom খেলে তা রক্তের সাথে মিশতে নাও পারে,তবে যদি কারো দেহের অভ্যন্তরে কোনো ইনফেকশন থেকে থাকে তবে তার মধ্যে দিয়ে Venom রক্তে গিয়ে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে

তাছাড়া Venom যেহেতু প্রোটিনের একটি জটিল উপাদান এবং আমাদের দেহে বিভিন্ন প্রকার প্রোটিওলাইটিক এনজাইম রয়েছে যেগুলো প্রোটিনকে ভেঙে ফেলে। তাই Venom আমাদের শরীরের কোনো ক্ষতি নাও করতে পারে।

প্রতিটি নিয়মেরই কিছু ব্যতিক্রম থাকে। যেমনঃ উপরে বলা হয়েছে যে বিষধর সাপরা বিষাক্ত হয়না,কিন্তু এই নিয়মেরও ব্যতিক্রম আছে।উদাহরণস্বরূপ বলা যায় - " লাল ঘাড় ঢোঁড়া সাপ (Red-necked keelback) " নামক এক প্রকার সাপ রয়েছে যারা একইসাথে বিষধর এবং বিষাক্ত।।।।

Post a Comment

0 Comments