গোখরা প্রজাতির সাপদের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এরা উত্তেজিত হলে ফণা (Hood) তুলে এবং ফিস ফিস শব্দ করে কামড়াতে আসে। এলাপিডি পরিবারভূক্ত এরকমই একটি তীব্র নিউরোটক্সিন বিষধর সাপ " খৈয়া গোখরা "।
খৈয়া গোখরার ইংরেজি নাম Spectacled Cobra, বৈজ্ঞানিক নাম Naja naja. এদের গায়ের রং বাদামী অথবা কালচে বাদামি ও শরীর মসৃণ আঁশে আবৃত। এদের ফণার পেছনে চশমা অথবা U- আকৃতির মতো দেখতে ছোপ বা চিহ্ন থাকে যা দ্বারা পদ্ম গোখরা থেকে এদেরকে পৃথক করা যায় । এরা লম্বায় প্রায় ১-১.৫ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।
![]() |
ছবি : খৈয়া গোখরা (Source : Pexels) |
বাংলাদেশের সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চল ছাড়া প্রায় দেশের সর্বত্রই এদেরকে দেখা যায়, তবে উত্তরবঙ্গের মতো শুষ্ক জায়গায় এদেরকে বেশি দেখা যায়। খৈয়া গোখরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন নামে পরিচিত। এদের অন্যান্য ইংরেজী নামের মাঝে আছে Indian Cobra, Asian Cobra বা Binocellate Cobra.
খৈয়া গোখরা শুষ্ক জায়গায় থাকতে পছন্দ করে। তাই এরা মানুষের বসতবাড়ির আশপাশে, গুহা, আবাদি জমি, বনাঞ্চল ও পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাস করে।
এরা নিশাচর (রাতের বেলা চলাফেরা করে) প্রজাতির সাপ এবং দ্রুত চলাফেরা করে। খাদ্য তালিকায় রয়েছে - ইঁদুর, ছোট পাখি, ব্যাঙ, ছোট মাছ, ছোট সাপ, টিকটিকি ইত্যাদি। খৈয়া গোখরা এপ্রিল থেকে জুলাই মাসের মধ্যে ডিম পাড়ে। এসময় স্ত্রী গোখরা সাপ ১০-৩০ টি ডিম পাড়ে এবং প্রায় দুই মাস ধরে ডিম পাহারা দেয় তবে ডিমে তা দেয় না। সাধারণত ৪৮-৬৯ দিনের মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। বাচ্চাগুলোর দৈর্ঘ্য ২০-৩০ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে।
খৈয়া গোখরা ফণা তুলে অনেকক্ষণ থাকতে পারে। এদের ফণা বেশ প্রসারিত ও পাতলা হয়ে থাকে। দেহের আইশগুলো অনেকটা শিমের বিচি বা বরবটির মতো দেখায়, আইশগুলোর মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থানে সাদা সাদা দাগ দেখা যায়। পদ্ম গোখরার মতো খৈয়া গোখরার দেহের রঙের এতোটা তারতম্য থাকে না (মর্ফোলজিক্যাল ভ্যারিয়েশন)।
খৈয়া গোখরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত। খড়মপায়া,খরিস, দুধে খরিস,তেতুল খরিস, খৈয়া হান্নক বা খৈয়া ফানো (কুমিল্লা), গোমা (রাজশাহী), আলাদ (রংপুর), গোক্কুর আলাদ (কুড়িগ্রাম), খৈয়া জাইত সাপ (বরিশাল), জাইত সাপ (সাতক্ষীরা), জাতি সাপ (চাঁদপুর), কুলিম বা গোমা (নাটোর), জাত সাপ (যশোর), কাল জোরো (চট্টগ্রাম), গোমা (বগুড়া), খৈইয়া হানক (নোয়াখালী), গুক্কু (পাবনা), পানস (নারায়ণগঞ্জ), ফানস সাপ (নরসিংদী) ইত্যাদি নামে এদেরকে ডাকা হয়। বাংলাদেশ ছাড়াও এদেরকে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে যেমন ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল প্রভৃতিতে দেখা যায়।
খৈয়া গোখরা কাউকে কামড়ালে কামড়ানোর কয়েক ঘন্টা পর থেকে রোগীর ঘুম ঘুম ভাব হবে, চোখ বুজে আসতে থাকে, আক্রান্ত স্থান ও তার আশপাশের অংশ ফুলে উঠবে, বমি বমি ভাব হবে, জ্বর আসতে পারে, রোগীর স্মৃতিশক্তি লুপ পেতে থাকে।
এদের বিষ পোস্ট-সিন্যাপটিক নিউরোটক্সিন হওয়ায় মানবদেহের স্নায়ূতন্ত্রকে আক্রমণ করে, যার ফলে রোগীর প্যারালাইসিস হতে পারে। পাশাপাশি এরা কার্ডিওটক্সিন বিষও ধারণ করে যা মানুষের হৃদপিণ্ডকে আক্রমণ করে। এদের বিষের SCLD50 প্রায় 0.56 মিলিগ্রাম /কেজি।
বাংলাদেশ ও ভারতে খৈয়া গোখরার কামড়ে মৃতের সংখ্যা অনেক বেশি, মূলত কামড়ানোর পর রোগীকে হাসপাতালে না নিয়ে ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া এই বিরাট সংখ্যার একটা মূল কারণ হতে পারে। যদিও এরা অসংখ্য ড্রাই বাইট (কামড়াবে কিন্তু বিষ ঢালবে না) করে, তবে কামড়ের একমাত্র চিকিৎসা এন্টি-ভেনম নেয়া।
.jpg)
0 Comments