ভাইপারিডি গোত্রের ক্রোটালিনি উপগোত্রের বিষধর ভাইপারদেরকে একটি বিশেষ নামে ডাকা হয়, পিট ভাইপার। কারন তাদের মাথায়, চোখ ও নাকের মধ্যবর্তী স্থানে একটি পিট বা তাপ সংবেদনশীল অঙ্গ থাকে। এই পিটের উপস্থিতির জন্য এদেরকে পিট ভাইপার বলা হয়। এই পিটকে ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলা যায়, কারণ তা ইনফ্রারেড তাপ বিকিরণকে (তরঙ্গদৈর্ঘ্য ৫ থেকে ৩০ মাইক্রোমিটার) শনাক্ত করে এই সাপদেরকে নিখুঁতভাবে দেখতে সাহায্য করে। এমনকি আলোর অনুপস্থিতিতেও এরা এই পিটের সাহায্য নিখুঁতভাবে শিকারকে আঘাত হানতে পারে কিংবা বেশ দূরের কোনো তাপ বিকিরণকারী উষ্ণ বস্তুকে শনাক্ত করতে পারে যা তাদেরকে শত্রুর হাত থেকে পালাতে সাহায্য করে। যদিও বোয়া ও পাইথনদের দেহে পিট অঙ্গ আছে, কিন্তু পিট ভাইপারদের মতো এতো আধুনিক নয়।
পূর্বেকার গবেষণা ও ধারণা অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট ৪ ধরনের পিট ভাইপার পাওয়ার কথা উল্লেখ আছে - পাহাড়িবোড়া (Mountain Pit Viper, Ovophis monticola), টিয়াবোড়া (White-lipped Pit Viper, Trimeresurus albolabris), দাগীলেজা সবুজবোড়া (Red-tailed Bamboo Pit Viper, Trimeresurus erythrurus), পপের সবুজবোড়া (Poep's Bamboo Pit Viper, Trimeresurus popeiorum).
কিন্তু, পরবর্তীতে বাংলাদেশে মূলত দুইটি পিট ভাইপারের অস্তিত্ব নিশ্চিত হওয়া গেছে। পাহাড়িবোড়ার কোনো নিশ্চিত রেকর্ড মেলেনি, তবে থাকার সম্ভাবনা আছে আর টিয়াবোড়া বাংলাদেশে নেই।
![]() |
ছবি : পপের সবুজবোড়া ( PC : iNaturalist) |
বাকী দু'টি প্রজাতির সবুজবোড়া বাংলাদেশের বাসিন্দা, বিশেষকরে সিলেট ও চট্টগ্রামের পাহাড়গুলোতে পাওয়া যায়।
" সবুজবোড়া " নামটি থেকেই বোঝা যাচ্ছে তাদের দেহের রঙ সবুজ হবে। আসলে এই দুটি সাপই সবুজ রঙের। দুটি সাপেই ওভোভিভিপেরাস ধরনের প্রজনন হয়ে থাকে এবং দুটিই ঝোপঝাড়ে থাকতে পছন্দ করে।
বৃক্ষচারী এইসব ভাইপারদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে ছোট ছোট পাখি, ব্যাঙ, ইঁদুর ও ইঁদুরজাতীয় প্রাণী, লিজার্ড প্রভৃতি।
দাগীলেজা সবুজবোড়ার মাথা সবুজ, পীঠ উজ্জ্বল সবুজ বর্ণের। ভারত (মিজোরাম, সিকিম, মণিপুরে), ভূটান, বাংলাদেশ, নেপাল ও মিয়ানমারে পাওয়া যায়। এটির বিভিন্ন আঞ্চলিক নাম আছে, যেমন : গেছোবোড়া, কচুপাতা সাপ, গালটুবা ইত্যাদি। বাংলাদেশের বৃহত্তর সিলেট, বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগে এর দেখা মেলে।
আর পপের সবুজবোড়ার উপরের দিক সবুজ, নিচ ধূসরাভ সবুজ থেকে হলদে রঙের। বাংলাদেশ, ভারত (মেঘালয়, অরুণাচল প্রদেশ, দার্জিলিং প্রভৃতি), নেপাল, মিয়ানমার ইত্যাদিতে দেশে পাওয়া যায়। এটিকে দাগীলেজা সবুজবোড়ার মতো সচরাচর দেখতে পাওয়া যায় না, এজন্য এর কোনো আঞ্চলিক নাম নেই। বাংলাদেশের বৃহত্তর সিলেট ও বৃহত্তর চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে এটিকে পাওয়া যায়।
![]() |
ছবি : দাগীলেজা সবুজবোড়া ( PC : India Biodiversity Portal) |
সবুজবোড়ার বিষ সাধারণত হেমোটক্সিন ধারণ করে যা টিস্যুকে ক্ষতিগ্রস্ত ও অঙ্গহানী ঘঠায়।
থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার বাসিন্দা Trimeresurus গণের Clouded Pit Viper (Trimeresurus nebularis) এর বিষের উপর গবেষণা চালানো হয়েছিলো, তাতে বেশকিছু বিষাক্ত উপাদান পাওয়া গেছে। উপাদানগুলো হলো - সাপের বিষ মেটালোপ্রোটিনেজ (SVMP), বিভিন্ন প্রকারের প্রোটিন, ফসফোলাইপেজ, সেরিন প্রোটিয়েজ, বিভিন্ন প্রকারের ডিসইন্টিগ্রিন ইত্যাদি।
সবুজবোড়ারা বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর সাপ, তবে পাহাড়ি অঞ্চলে ঘুরাফেরার সময় ঝোপঝাড়ে এদের সাথে সাক্ষাৎ ঘঠতে পারে। যেহেতু ভাইপার, তাই কামড় বসিয়ে দিতে দ্বিধা করবে না। সুতরাং বনজঙ্গলে চলাফেরায় সতর্ক থাকতে হবে।


0 Comments