আমাদের কোনো কিছু শুনার বিষয়টা আমাদের কানের সাথে সম্পর্কিত। মানবদেহের কর্ন অন্যতম সংবদী অঙ্গ যা প্রধানত তিনটি অংশের সমন্বয়ে গঠিত, বহিঃকর্ন (External Ear), মধ্যকর্ন (Middle Ear) ও অন্তঃকর্ন (Internal Ear)।
সাপের শব্দ শোনার প্রক্রিয়াটি বুঝতে হলে মানুষের শ্রবণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা থাকা প্রয়োজন।
বাতাসে ভেসে বেড়ানো শব্দ তরঙ্গ যখন মানুষের কর্নছত্র (Pinna) দিয়ে প্রবেশ করে কানের পর্দাকে (টিমপেনিক পর্দা) আঘাত করে, তখন সেখানে কম্পন সৃষ্টি হয়। পরে এই কম্পন মধ্যকর্নের তিনটি অস্থি - মেলিয়াস, ইনকাস ও স্টেপিস (মানবদেহের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম অস্থি) দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ফেনেস্ট্রা ওভালিস হয়ে অন্তঃকর্নের পেরিলিম্ফ ও এন্ডোলিম্ফে যায়। সেখানে বেসিলার পর্দা ও বিশেষ এক প্রকারের লোমকোষকে এই কম্পন উদ্দীপিত করে স্নায়ূ তাড়না সৃষ্টি করে। এই স্নায়ূ উদ্দীপনা সংবেদী অডিটরী স্নায়ূর মাধ্যমে মস্তিকে পৌঁছালে আমরা শব্দ শুনতে পাই।
আমাদের মতো সাপের কোনো বহিঃকর্ন ও মধ্যকর্ন নেই। তার পরিবর্তে তাদের কার্যকরী অন্তঃকর্ন (যাকে Columella বলা হয়) আছে এবং মাথায় চোয়ালের সাথে একটি বিশেষ হাড় (Quadrate Bone) থাকে যেগুলো মাটিতে থাকা কম্পনে প্রকম্পিত হয়।
![]() |
PC : Pixabay |
মানুষের অন্তঃকর্ণ পেরিলিম্ফ (Prilymph) ও এন্ডোলিম্ফ (Endolymph) নামক তরলে পূর্ণ থাকে। অন্যদিকে সাপের অন্তঃকর্ণ বায়ুপূর্ণ থলি দিয়ে গঠিত।
সাপ যখন কোনো মাধ্যমের উপর দিয়ে চলতে থাকে তখন সেই মাধ্যমে উৎপন্ন কম্পন তাদের চোয়ালের হাড়ে (Jawbone) প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, এই কম্পন ঐ হাড় দিয়ে ককলিয়া বা অন্তঃকর্ণে পৌঁছায়। সর্বশেষে, অন্তঃকর্ন থেকে অডিটরি স্নায়ুর মাধ্যমে ঐ সংকেতটা যখন মস্তিষ্কে পৌঁছায় তখন সাপ শুনতে পায়।
আগে মনে করা হতো সাপ শুধুমাত্র মাটির কম্পনের মাধ্যমেই শুনতে পায়, বাতাসে ভেসে আসা শব্দ তরঙ্গ তারা একেবারেই শুনতে পায়না। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটির Dr. Christina Zdenek ও প্রফেসর Damian Candusso একটি গবেষণা করে দেখান যে বাতাসে ভেসে আসা শব্দ তরঙ্গের প্রতি সাপ প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে। কিন্তু সাপ কীভাবে শুনতে পায়, সে প্রক্রিয়া তারা বের করতে পারেননি।
অনেকে মনে করে থাকেন যে সাপ জিহবা দিয়ে শুনতে পায়। এটা আসলে পুরোপুরিই একটা ভূল ধারণা। সাপ কখনো জিহবা দিয়ে শুনতে পারেনা, সাপ বরং জিহ্বা বের করে তার পরিবেশকে আরো গভীরভাবে উপলব্ধি করে থাকে।
তারা বারবার জিহবা বের করে আশেপাশের পরিবেশ (মাটি/ বায়ূ /পানি) থেকে বিভিন্ন প্রকারের রাসায়নিক বস্তু বা গন্ধ নেয়। পরবর্তীতে জিহ্বা এই গন্ধকে একটি বিশেষ অঙ্গতে পাঠায় যাকে ভোমেরোন্যাসাল অঙ্গ (Vomeronasal Organ) বা জ্যাকবসনের অঙ্গ (Jacobson's Organ) বলা হয়। এই অঙ্গটি সাপের মাথার উপরের তালুর দিকে অবস্থিত। পরিবেশ থেকে প্রাপ্ত এই সংবেদনাকে (রাসায়নিক বস্তু) ভোমেরোন্যাসানল অঙ্গ বিশ্লেষণ করে নার্ভের মাধ্যমে মস্তিষ্কে পাঠায়, সর্বশেষে মস্তিষ্ক সবকিছু বিশ্লেষণ করে উপযুক্ত সাড়া প্রদান করে।
এই সংবেদনশীল অঙ্গটি সাপ তাদের শিকার ধরতে ও শিকারী থেকে আত্মরক্ষায়, সঙ্গীকে খোঁজা ও যোগাযোগ এবং বিবিধ কাজে ব্যবহার করে থাকে।
এই জ্যাকবসনের অঙ্গটি শুধুমাত্র সাপেই থাকেনা, লিজার্ড থেকে শুরু করে বিড়াল, কুকুর, শূকর ইত্যাদিতেও উপস্থিত থাকে। মানবদেহেও সম্ভবত নিস্ক্রিয় অঙ্গ হিসেবে থাকে।

0 Comments