কিছু কিছু সাপের প্রজাতি আছে যারা শুধুমাত্র বছরের নির্দিষ্ট একটি সময়ে মিলন করে, কিছু প্রজাতি আছে যারা সারাবছরই মিলন করে থাকে।
প্রজনন মৌসুমে স্ত্রী সাপ পুরুষ সাপকে আকৃষ্ট করতে ফেরোমেন (এক প্রকার রাসায়নিক বস্তু যা একই প্রজাতির প্রাণিদের মধ্যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে থাকে) নিঃসরণ করে। এই ফেরোমেন স্ত্রী সাপের প্রজনন অঙ্গ Cloaca দিয়ে নির্গত হয়ে থাকে (পাখি, উভচর ও সরীসৃপের দেহের Cloaca একটি ছিদ্রপথ যার দ্বারা এইসব প্রাণী দৈহিক বিপাকক্রিয়ায় উৎপন্ন সব বর্জ্য পদার্থ বের করার পাশাপাশি প্রজননের সব কার্যকলাপ সম্পন্ন করে থাকে, এটি Coprodeum, Urodeum ও Proctodeum নামক তিনটি অংশের সমন্বয়ে গঠিত)। পুরুষ সাপেরা সেই ফেরোমেনকে লক্ষ্য করে স্ত্রী সাপের নিকটবর্তী হয়। পরে পুরুষ সাপ স্ত্রী সাপের কাছে নিজেকে উপযুক্ত প্রমান করার জন্য হরেকরকমের দেহভঙ্গি প্রদর্শন করতে থাকে (একে Courtship বলা হয়), সেই দেহভঙ্গি স্ত্রী সাপের পছন্দ হলে মিলন শুরু হয়। অনেকসময় একাধিক পুরুষ সাপ থাকলে তাদের মধ্যে অধিক যোগ্য পুরুষ প্রমাণের জন্য বিভিন্ন রকমের সংঘাত ঘঠে। কম্বেট ড্যান্স এক্ষেত্রে খুবই উল্লেখযোগ্য একটি উদাহরণ ( বাংলাদেশের দাঁড়াশ, ক্রেইটদের মধ্যে এটি প্রায়ই দেখা যায়)। কখনো কখনো কোনো পুরুষ সাপও ফেরোমেন নির্গত করতে পারে, তবে এটি অন্য পুরুষ সাপকে বিভ্রান্ত করার জন্য করে থাকে।
সাপের প্রজনন মূলত অন্তঃনিষেক (Internal Fertilization) অর্থাৎ যৌন মিলনের সময় স্ত্রী সাপের দেহাভ্যন্তরে পুরুষের শুক্রাণু ও স্ত্রী'র ডিম্বানুর মিলন ঘঠে। মিলনের পরে স্ত্রী সাপ পুরুষের শুক্রাণুকে কয়েকমাস পর্যন্ত দেহের ভিতরে জমা রাখতে পারে। জমা রাখার মূল কারণ হলো, অনেকসময় পরিবেশে খাদ্যের অভাব দেখা দেয়, উপযুক্ত ও নিরাপদ স্থান থাকেনা এবং আবহাওয়া প্রতিকূল থাকে। শিশু সাপদেরকে যাতে এই প্রতিকূলতা মোকাবিলা করতে না হয় এজন্য স্ত্রী সাপ নিষেক প্রক্রিয়ায় বিলম্ব করে থাকে।নিষেক প্রক্রিয়া শেষে সাপের প্রজাতি অনুযায়ী বিভিন্ন পদ্ধতিতে বাচ্চাদের জন্ম হয়ে থাকে।
![]() |
From Pixabay |
সাপের ক্ষেত্রে আমরা সাধারণত চার ধরনের পদ্ধতি দেখতে পাই।
ডিম পাড়া (Oviparity) - এই পদ্ধতিতে স্ত্রী সাপেরা ডিম পাড়ে। ডিম পাড়ার সময় তারা উপযুক্ত, নিরাপদ ও উষ্ণ স্থান বাছাই করে। প্রায় ৭০ শতাংশ সাপই এই পদ্ধতিতে বংশবৃদ্ধি করে থাকে। অনেকসময় অনেক সাপের প্রজাতি ডিমকে তা দিয়ে থাকে।
সরাসরি বাচ্চা প্রসব (Viviparity) - এসব সাপেরা সরাসরি বাচ্চা প্রসব করে থাকে। বাচ্চাদের দৈহিক বৃদ্ধি ও বিকাশ মায়ের দেহাভ্যন্তরেই ঘঠে এবং জীবন্ত বাচ্চা প্রসব করে। বাংলাদেশের বালুবোড়া (Russell’s Sand Boa), মেটে (Rainbow Eater Snake) প্রভৃতি সাপ সরাসরি বাচ্চা প্রসব করে।
ওভোভিভিপারিটি (Ovoviviparity) - এই পদ্ধতিতে স্ত্রী সাপ সরাসরি ডিম পাড়েনা বরং ডিম দেহের অভ্যন্তরে রেখে তাকে বিকশিত করতে থাকে এবং উপযুক্ত পরিবেশ ও সময়ে পূর্ণাঙ্গ বাচ্চা প্রসব করে। গার্টার স্নেক, পিট ভাইপারদের মধ্যে এই পদ্ধতি দেখা যায়।
পার্থেনোজেনেসিস (Parthenogenesis) - আশেপাশে যখন পুরুষ সাপের তীব্র অভাব দেখা দেয়, তখন স্ত্রী সাপের ডিম্বানু শুক্রাণু ও নিষেক ছাড়াই বিকশিত হতে শুরু করে এবং বংশবৃদ্ধি করে, এই ঘঠনাকে পার্থেনোজেনেসিস বলা হয়। পাইথন, বোয়া ইত্যাদিতে এই পদ্ধতি দেখা যায়।
Viviparous এবং Ovoviviparous এর মধ্যে সবথেকে বড় পার্থক্য হলো - ওভোভিভিপেরাসে মায়ের পেটের ভিতরে ডিম থাকে, সরাসরি কোনো ভ্রুন থাকে। বাচ্চারা এই ডিমের মধ্যেই মায়ের থেকে সব পুষ্টি পেয়ে বিকশিত হতে থাকে এবং জন্মানোর সময় জীবন্ত বাচ্চা হিসেবে পৃথিবীতে আসে। অন্যদিকে ভিভিপেরাসের মধ্যে কোনো ডিম থাকেনা, সাপের ভ্রুন সরাসরি মায়ের পেটে থাকে এবং পুষ্টি পেয়ে পূর্ণ বিকশিত অবস্থায় জন্মগ্রহন করে।

0 Comments