দেহের আঁইশ সাপের পরিচয়ের ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা রাখে। যদিও সাপের স্কেল দেখে সাপের পরিচয় বের করাটা সবার জন্য সম্ভবপর হয়না।
সাপের আঁইশ বা স্কেল তাদের ত্বকের বহিঃস্তর (এপিডার্মিস) থেকে উদ্ভূত হয়ে থাকে। এগুলো এক প্রকারের গাঠনিক প্রোটিন "কেরাটিন" দিয়ে তৈরী ( আমাদের দেহের নখ ও চুল, পাখির পালক, স্তন্যপায়ীর শিং প্রভৃতিও এই কেরাটিন প্রোটিন দিয়ে তৈরী)। সাপের দেহের পুরো এপিডার্মিস বা বহিঃত্বক এই আঁইশ দ্বারা ঢাকা থাকে। এগুলোকে স্পর্শ করলে ঠান্ডা ও শুষ্কতা অনুভূত হয়।
সাপের বাইরের আঁইশ তাদের টিকে থাকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। এগুলো সাপের দেহকে বাইরের যেকোনো যান্ত্রিক আঘাত বা চাপ থেকে সুরক্ষা দেয়, নির্বিঘ্নে চলাচলে সাহায্য করে, দেহের ভেতরের আর্দ্রতাকে ধরে রাখে, শিকার ধরতে ও প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে সাহায্য করে।
![]() |
ছবি : সাপের স্কেল (PC : Unsplash) |
একটি সাপ যতোটি আঁইশ নিয়ে জন্মগ্রহন করে, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সে সংখ্যার কোনো পরিবর্তন হয়না, তবে আকারের পরিবর্তন হয়। সাপ তাদের দৈহিক বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত দেহের খোসা পরিবর্তন করে যাকে মোল্টিং বলা হয়। প্রতিটি মোল্টিং এর সময় সাপের আঁইশের আকার বাড়ে।
প্রতিটি প্রজাতির সাপের আঁইশের কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য থাকে, তাই সাপের আঁইশ দেখে খুব সহজেই সাপের প্রজাতি নির্ণয় করা যায়। কিন্তু আঁইশ দেখে সাপের পরিচয় নির্ণয় সবার পক্ষে সম্ভব নয়।
সাপের পুরো দেহকে যদি আমরা পতঙ্গের (Insects) মতো তিনটি অংশে ভাগ করে নেই, তবে মাথা, দেহ ও লেজের আঁইশের বিন্যাসে যথেষ্ট পরিবর্তন দেখতে পাবো।
মাথার আঁইশ (Head Scales)
অনেক প্রজাতির সাপের মাথার দেহে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্কেল থাকে, যেগুলোকে গণনা করা প্রায় অসম্ভব, যেমন : Python, Bitis, Echis গণের সাপেদের মাথার স্কেল। আবার বেশিরভাগ সাপের মাথায় খুবই সুন্দরভাবে আঁইশের বিন্যাস লক্ষ্য করা যায়।
![]() |
ছবি : মাথার স্কেল ( PC : Wikipedia) |
নাক যে অংশে থাকে সে স্কেলের নাম ন্যাসাল (Nasal) স্কেল, মাথার একেবারেই সম্মুখে (তুন্ডে) থাকে রোস্ট্রাল (Rostral) স্কেল, চোখে স্বচ্ছ স্পেক্টাকিউলার (Ocular/ Spectacular) স্কেল, ঠোঁটের দিকে ল্যাবিয়াল (Labials) স্কেল, মুখের দুই দিকে থাকে সুপ্রালেবিয়াল (Supralabials) স্কেলের সারি ও নিচের ঠোঁটে ইনফ্রালেবিয়াল ( Infralabials) স্কেল।
মাথার উপরে অবস্থান অনুযায়ী ইন্টারন্যাসাল (Internasal), প্রি-ফ্রন্টাল (Prefrontal), ফ্রন্টাল (Frontal), প্যারাইটাল (Parietal) ও টেম্পোরাল (Temporal) স্কেল থাকে। মুখের নিচের দিকে মেন্টাল (Mental) স্কেল ও পেটের স্কেলকে স্পর্শ করে থাকে গিউলার (Gular) স্কেল।
![]() |
ছবি : মাথার নিচের স্কেল ( PC : Wikipedia) |
দেহ ও লেজের আঁইশ (Body and Tail Scales)
দেহের পৃষ্ঠের দিকের সবগুলো স্কেলকে ডর্সাল (Dorsal) স্কেল বলা হয়। কখনো কখনো কোনো প্রজাতির সাপের পীঠ বরাবর বড় ও স্পষ্ট আঁইশের সারি থাকতে পারে যাকে ভার্টিব্রাল (Vertebral) স্কেল বলা হয়। পেটের সবগুলো আঁইশের নাম ভেন্ট্রাল (Ventral) স্কেল।
সাপের পেটের স্কেলের সমাপ্তি ঘঠে তাদের জনন ও রেচনতন্ত্রকে ঘিরে থাকা ক্লোকাল (Cloacal) স্কেলে, এর পরবর্তী লেজের সবগুলো স্কেলের নাম সাব-কডাল (Subcaudal) স্কেল।
![]() |
ছবি : সাপের লেজের স্কেল ( PC : Wikipedia) |

.jpg)
.jpg)

0 Comments