Advertisement

সাপকে শনাক্তকরণের উপায় (Way of Identifying Snakes)

 সাপকে চেনার উপায় (Way of Identifying Snakes)

সাপকে চেনার সবথেকে সহজ উপায় হচ্ছে তাদের দেহের রঙ (Body Colour) , শরীরের প্যাটার্ন (Body Pattern) ও কোন জায়গায় সাপটিকে পাওয়া গেছে (Geographic Location) তা দেখা। তাছাড়াও যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে, সাপের দেহের আকার (Body Size), দেহের আকৃতি (Body Shape) এবং মাথার আকৃতি (Head Shape)। সাধারণত এইসব বৈশিষ্ট্য দেখেই সাপকে খুব সহজে চেনা যায়। তবে যদি এগুলো দ্বারা সাপকে চিনতে অসুবিধা হয়, তবে তাদের আচরণ (Behaviour), দেহের স্কেল (Scales) ও দাঁতের গঠন (Dentition) দেখে নিশ্চিতভাবে তাদের পরিচয় নির্ণয় করা যায়।


ছবি : Pixabay

ভৌগোলিক অবস্থান (Geographical Location) 

ভৌগোলিক অবস্থান সাপকে চেনার সবচেয়ে কার্যকরী উপায়গুলোর একটি। এই পৃথিবীতে বসবাসকারী সব প্রাণির একটি নির্দিষ্ট পরিবেশ আছে, এই পরিবেশ তাদেরকে বেঁচে থাকার সব প্রয়োজনীয় উপকরণ যেমন : পর্যাপ্ত পানির সরবরাহ, তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ, খাদ্য ইত্যাদি সরবরাহ করে থাকে। সাপের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একইভাবে প্রযোজ্য। কোনো নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট প্রজাতির সাপকে ঠিকে থাকতে হলে পরিবেশের বেশকিছু শর্ত পূর্ণ করতে হয়। তাই সব সাপকে সব ভৌগোলিক অবস্থানে পাওয়া সম্ভব নয়।

বাংলাদেশ আয়তনে ক্ষুদ্র হলেও এতে পরিবেশগত বৈচিত্র্য খুবই প্রখর। বাংলাদেশের দক্ষিণ দিকটার পুরোটাই দখল করে আছে লোনাপানির বঙ্গোপসাগর, তাই বাংলাদেশের দক্ষিনাঞ্চলে সাগরে যেসব প্রজাতির সাপ পাওয়া যায়, তারা সবাই সামুদ্রিক (Marine Snakes)। 

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের আবহাওয়া আর্দ্র, বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ অনেক। তাই এসব অঞ্চলের সাপদের বিশেষ অভিযোজন থাকে। আবার দেশের উত্তরাঞ্চলের পরিবেশ অনেকটা শুষ্ক, তাই সেসব অঞ্চলের সাপদেরও বিশেষ বৈশিষ্ট্য থাকে।

চন্দ্রবোড়া বা রাসেল'স ভাইপার শুষ্ক পরিবেশে থাকতে পছন্দ করে এবং আর্দ্র পরিবেশকে এড়িয়ে চলে। এখন যদি কেউ দাবী করেন তিনি সিলেটের কোনো পাহাড়ি অঞ্চলে চন্দ্রবোড়া দেখেছেন, তাহলে সেটা হয়তো তিনি ভূল দেখেছেন, সাপকে চিনতে ভূল করেছেন অথবা দূর্ঘটনাক্রমে কোনো একটি সাপ ঐ পরিবেশে চলে এসেছে।

তাই সাপ চেনার ক্ষেত্রে ভৌগোলিক অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 


দেহের রঙ ও প্যাটার্ন (Body Colour & Pattern) 

আসলে আমরা যেকোনো সাপকে দেখামাত্রই তার দেহের রঙের মাধ্যমে খুব সহজেই তাকে শনাক্ত করতে পারি। অনেক সাপের ক্ষেত্রে দেহের রঙের পাশাপাশি নির্দিষ্ট বিন্যাসে কিছু রঙের ডোরা বা পট্রি (প্যাটার্ন) থাকে, সেক্ষেত্রে শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া আরো সহজতর হয়।

তবে মনে রাখতে হবে, দেহের রঙ ও প্যাটার্ন দিয়ে সবসময় প্রজাতি নিশ্চিতভাবে শনাক্তকরণ সম্ভব নয়। উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি, নির্বিষ দাঁড়াশ সাপের একটা মর্ফ (দেহের রঙ ও প্যাটার্ন) আছে যেটাতে কালো রঙের মাঝে সাদা সাদা ব্যান্ড থাকে। সেই একইরকম কালো ও সাদার ব্যান্ড থাকে (প্রায় হুবহু, পার্থক্য করা অনেক কঠিন) তীব্র বিষধর ওয়াল'স ক্রেইটের। এজন্য অনেকসময় দুটি প্রজাতি আলাদা করাটা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। কিছুদিন আগেও একটা ভিডিওতে দেখেছিলাম একজন গ্রামীন লোক দাঁড়াশ ভেবে ওয়াল'স ক্রেইটকে হাতে ধরে রেখেছিলেন এবং তাকে সে সাপ কামড়ও দিয়েছিলো, ফলস্বরূপ তিনি এখন কবরে আছে।

কিছু কিছু প্রজাতির অপরিণত সাপের দেহের রঙ ও প্যাটার্ন পরিণত সাপের চাইতে সম্পূর্ণ ভিন্ন হয়ে থাকে। অনেকসময় বোঝাই যায়না যে এরা বড় হয়ে ঐ প্রজাতির সাপ হয়ে থাকবে। আবার অনেক সাপের পুরুষ ও স্ত্রী দেহের রঙেও বেশ পার্থক্য দেখা যায়। বাংলাদেশে বসবাসরত এক প্রজাতির লাউডগা সাপের (Ahaetulla anomala) পুরুষের দেহের রঙ সবুজ কিন্তু স্ত্রী সাপের বাদামী ( বিজ্ঞানের ভাষায় এসব বৈশিষ্ট্যকে Sexual Dimorphism বলা হয়)।


সাপের আকার (Size of Snake)

সাপের আকার অনেকসময় সাপকে শনাক্তকরনে ব্যবহৃত হতে পারে। আকারের উপরে ভিত্তি করে আমরা সাপকে ছোট, মাঝারি, বড় ও দৈত্যাকৃতির আকারের সাপ হিসেবে বিভক্ত করতে পারি।

তবে আকারের আদর্শ মান নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখা থাকতে পারে। আমরা সাধারণত ১ মিটারের চাইতে ছোট সাপকে ছোট সাপ, ১-২ মিটারেরগুলোকে মাঝারি, ২-৩ মিটার হলে দীর্ঘ বা বড় এবং ৩ মিটারের বেশি হলে দৈত্যাকৃতির হিসেবে ধরে নেই।

বাংলাদেশের শঙ্খচূড়, গোলবাহার, বার্মিজ অজগরকে দৈত্যাকৃতির সাপ বলা যায়। শঙ্খিনী ও আফ্রিকার ব্ল্যাক মাম্বাকে (পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহৎ বিষধর সাপ) বড় আকারের। পাতি কালাচ, পদ্ম গোখরা ও ওয়াল'স ক্রেইট প্রভৃতিকে মাঝারি আকারের এবং দুমুখো সাপ, লাল দুধরাজ, পপের সবুজবোড়া ইত্যাদিকে ছোট আকারের সাপ বলা যায়। 


দেহের আকৃতি (Body Shape)

সাপের দেহের আকৃতি সাপকে চেনার ক্ষেত্রে অনেকটা উপকারী হতে পারে। শঙ্খিনীর দেহ মোটা ও ত্রিকোণাকৃতির। পদ্ম গোখরা, খৈয়া গোখরাসহ বেশিরভাগ সাপের দেহ গোলাকৃতির। চন্দ্রবোড়া, বালুবোড়া, কুকুরমুখো নোনাবোড়া প্রভৃতি সাপের দেহ মোটাসোটা ধরনের। বাংলাদেশের দুটি লাউডগা প্রজাতির দেহ লিকলিকে সুতার মতো চিকন।


মাথার আকৃতি (Head Shape)

সাপের মাথার আকারের দিকে লক্ষ্য রেখেও সাপকে শনাক্ত করা সম্ভব। অনেক সাপের মাথার আকৃতি গোলাকার, অনেকের ত্রিকোণাকৃতির, অনেকের লম্বাটে ইত্যাদি ধরনের।

অনেকসময় অনেকে সাপের মাথার আকৃতির মাধ্যমে সাপ বিষধর নাকি নির্বিষ তা বের করার চেষ্টা করেন, যেটা আসলে পুরোপুরিভাবে একটা ভূল পদ্ধতি। 


আচরণ (Behaviour) 

সাপের আচরণের মাধ্যমে সাপকে চেনা সম্ভব হতে পারে। কিছু কিছু প্রজাতির সাপ খুবই উগ্র ও ক্ষিপ্ত আচরণের হয়ে থাকে, আবার কিছু সাপ নিরীহ ধরনের। 

সাধারণত ভাইপারিডি পরিবারের প্রায় সবগুলো ভাইপার উগ্র ও বদমেজাজি হয়ে থাকে। এলাপিডি পরিবারের কোবরাদের গণও (Naja গণ) বেশ উগ্র। 

আবার অনেক সাপ প্রকৃতিতে নিরীহ হয়ে থাকে, কিন্তু মানুষের উপস্থিতি টের পেলে তা নিজেদের জন্য হুমকি মনে করে এবং কামড় বসিয়ে দেয়।


দেহের আঁইশ (Body Scales)

দেহের আঁইশ সাপের পরিচয়ের ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা রাখে। যদিও সাপের স্কেল দেখে সাপের পরিচয় বের করাটা সবার জন্য সম্ভবপর হয়না।

সাপের আঁইশ নিয়ে বিস্তারিত 


সাপের বিষদাঁত ( Fangs of Snakes)

সাপের বিষদাঁতও সাপকে চেনার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

সাপের দাঁত নিয়ে বিস্তারিত 


Post a Comment

0 Comments