কিং কোবরা বা শঙ্খচূড় (King Cobra) সাপ হচ্ছে এলাপিডি পরিবারভুক্ত এবং পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিষধর প্রজাতির সাপ যা প্রায় ৩.১৮ থেকে ৪ মিটার (১০.৪ থেকে ১৩.১ ফুট) পর্যন্ত লম্বা হতে পারে, তবে ৫.৮৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা কিং কোবরাও পাওয়া গেছে।শঙ্খচূড় বা রাজ গোখরার বৈজ্ঞানিক নাম Ophiophagus hannah। এটির নামের সাথে কোবরা যুক্ত থাকলেও এটি কিন্তু কোনো কোবরা প্রজাতির নয়, কারণ প্রকৃত কোবরারা এলাপিডি পরিবারের নাজা গণের অন্তর্ভুক্ত। তাছাড়া, এদের ফণাতে কোবরাদের মতো দাগ বা চিহ্ন থাকে না যা দ্বারা এদেরকে সহজেই কোবরাদের থেকে পৃথক করা যায় এবং এরা কোবরাদের থেকে আকারে অনেক বড় হয়ে থাকে।
কিং কোবরার প্রধান আবাসস্থল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। এদেরকে বাংলাদেশ (প্রধানত সুন্দরবন, চট্টগ্রাম ও সিলেট), ভারত, মায়ানমার, নেপাল, ভূটান, চীন, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশে পাওয়া যায়।
কিং কোবরাদের দেহের ভর সাধারণত ১০ থেকে ১২ কেজি হয়ে থাকে। এদের দেহের বর্ণ কালো, হলুদ কিংবা বাদামি হতে দেখা যায়, অনেকক্ষেত্রেই পিঠের অংশ কালো এবং বুকের অংশ হলুদ, তারমাঝে সাদা অথবা কালোর ডোরাকাটা থাকে। কিং কোবরা সাধারণত ২০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে।
রাজ গোখরার খাবারের প্রধান তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বিষধর এবং নির্বিষ সাপ। যেমনঃ খৈয়া গোখরা, পদ্ম গোখরা, চন্দ্রবোড়া , কালাচ, শঙ্খিনী প্রভৃতি। এরা এদের প্রজাতিভূক্ত ছোট সাপদেরকেও খেয়ে ফেলে।
এদের প্রজননকাল মার্চ থেকে মে পর্যন্ত। এসময় স্ত্রী মা সাপ প্রায় ৬-৪০টা পর্যন্ত ডিম পাড়ে এবং ডিম থেকে বাচ্চা বের হতে প্রায় ৬৬-১০৫ দিন সময় লেগে যায়।
বাচ্চা ফোটার আগ পর্যন্ত শঙ্খচূড় তার বাসাকে সবসময় পাহারা দিতে থাকে, এবং কোনো প্রাণীকে বাসার কাছে আসতে দেয় না (সরীসৃপের মতো নিম্ন শ্রেণির প্রাণীদের মাঝে এইরকম প্যারেন্টাল কেয়ার খুবই বিরল ঘঠনা)। শিশু শঙ্খচূড়ের দৈর্ঘ্য হয় প্রায় ৫৫ সেন্টিমিটার এবং এদেরও সক্রিয় বিষগ্রন্থি থাকে।
রাজ গোখরা সাপ নিজেরদের জন্য কিছু হুমকি মনে করলে খুবই হিংস্র হয়ে উঠে এবং দেহের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মাটি থেকে উপরে উঠিয়ে ছুবল মারতে পারে। তাছাড়া এরা বহুদূর থেকেও বিষ ছুড়ে মারতে পারে। এদের বিষের কামড়ের মৃত্যু হার শতকরা ৭৫ ভাগ।
কিং কোবরার বিষ প্রধানত নিউরোটক্সিন ( প্রাণিদেহের স্নায়ূতন্ত্রকে আক্রমণ করে)। এছাড়াও এতে সাইটোটক্সিন (প্রাণিদেহের কোষকে আক্রমণ করে) ও কার্ডিওটক্সিনও (হৃদপিণ্ডকে আক্রমণ করে) থাকে। শঙ্খচূড়ের একটি সাধারণ কামড়ই যেকোনো মানুষকে মেরে ফেলার জন্য যথেষ্ট। এরা প্রতি বাইটে প্রচুর বিষ ঢালে। কিং কোবরার বিষের SCLD50 এর মান 1.5-1.7 মিলিগ্রাম /কেজি। বিষের তীব্রতার দিক দিয়ে এটি পৃথিবীর ৩৯তম বিষধর সাপ এবং বাংলাদেশের ৮ম বিষধর সাপ (গ্লোবলা SCLD এর চার্ট অনুযায়ী)।
কিং কোবরা বনের খুব গভীরে চলাফেরা করে এজন্য মানুষের তেমন সংস্পর্শে আসে না এবং মানুষকে এড়িয়ে চলে।কখনো কারো সামনে পড়লেও নিজেদের জন্য হুমকি মনে না করলে আক্রমণ করে না।
ড্যানিশ প্রানিবিজ্ঞানী থিওডোর এডওয়ার্ড যখন সর্বপ্রথম কিং কোবরাকে শনাক্ত করেছিলেন, সেই থেকে প্রায় ১৮৮ বছর পর্যন্ত ওফিওফেগাস গণে শুধুমাত্র একটি প্রজাতিই ছিলো, কিন্তু ড. গৌরি শংকর ও তার নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী প্রায় ২০ বছর ধরে গবেষণা করে ২০২৪ সালে কিং কোবরাকে মোট ৪টি প্রজাতিতে বিভক্ত করেন। প্রজাতিগুলো হলো -
The Northern King Cobra (Ophiophagus hannah) - বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভূটান, চীন, হংকং, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশের বাসিন্দা।
Sunda King Cobra (Ophiophagus bungarus) - থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন প্রভৃতি দেশে বাস করে।
Western Ghats King Cobra (Ophiophagus kaalinga) - ভারতের তামিলনাড়ু, কেরেলা, কর্ণাটক, গোয়া ও মহারাষ্ট্রে এটি এন্ডেমিক।
Luzon King Cobra (Ophiophagus salvatana) - ফিলিপাইনের লুসান দ্বীপে এটি এন্ডেমিক। লুসান দ্বীপ ফিলিপাইনের বৃহত্তম দ্বীপ যেখানে ম্যানিলা ও কেসোনের মতো শহরগুলো অবস্থিত।
![]() |
ছবি : কিং কোবরা ( PC : Dr. Anand Titus, from Wikipedia) |
শ্রেণীবিন্যাস (Taxonomy)
KINGDOM : Animalia
PHYLUM : Chordata
SUBPHYLUM : Vertebrata
CLASS : Reptilia
ORDER : Squamata
FAMILY : Elapidae
GENUS : Ophiophagus
SPECIES : Ophiophagus hannah

0 Comments