Advertisement

পাহাড়িবোড়া বা মাউন্টেন পিটভাইপার (Mountain Pitviper)

পাহাড়ি বোড়া (Mountain Pitviper) হচ্ছে ভাইপারিডি পরিবারভূক্ত এবং হেমোটক্সিন বিষ সমৃদ্ধ একটি বিষধর সাপ। এটির বৈজ্ঞানিক নাম : Ovophis monticola। একে অনেক সময় Chinese Mountain Pitviper বা Spotted Mountain Pitviper বা Himalayan Mountain Pitviper ইত্যাদি নামেও ডাকা হয়।

এটিকে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, মায়ানমার, চীন, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, লাওস, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপ, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশে দেখা যায়।  অনেকের মত ছিল যে এটিকে বৃহত্তর ময়মনসিংহ এবং সিলেটের পাহাড়ি বনাঞ্চলে পাওয়া যেতে পারে, তবে বাংলাদেশে এটির অস্তিত্ব নিয়ে কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণ ছিলোনা। সম্প্রতি বান্দরবানে এটির সুস্পষ্ট রেকর্ড পাওয়া গেছে।


ছবি : পাহাড়িবোড়া সাপ (Adapted from Internet) 

পাহাড়ি বোড়ার দেহ মোটাসোটা ধরনের, দেহের উপরিভাগ হালকা গাঢ় বাদামী বা হলদে-গোলাপী রঙের। মাথা ত্রিকোনাকৃতির (Triangular) এবং গাঢ় বাদামী।  তুন্ড (Snout) ছোট, লোরিয়াল পিট ( ভাইপারিডি গোত্রের সাপদের চোখ এবং নাকের মাঝামাঝি স্থানে একধরনের পিট বা ছিদ্র থাকে যা থার্মাল সেন্সরের মতো কাজ করে। এটি দ্বারা এই গোত্রের সাপেরা অবলোহিত রশ্মি শনাক্ত করতে পারে আর এই পিট সংবেদকের জন্যই মূলত এসব সাপকে পিট ভাইপার বলা হয়) উপস্থিত। ঠোঁটে হালকা হলুদ বা বাদামী দাগ থাকে। দেহের অঙ্কীয়ভাগে প্রায় বাদামী বর্ণের দাগ থাকে।পাহাড়ি বোড়ার পুরুষ এবং স্ত্রী'দের আকারে পার্থক্য আছে। পুরুষরা প্রধানত ০.৫ মিটার এবং মহিলারা ১.১ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে।

 এরা শুকনো কাঠ এবং ঠান্ডা জায়গা পছন্দ করে। পাতার নিচে, কাঠের স্তুপ ইত্যাদিতে বসবাস করে।পাহাড়ি বোড়া মূলত নিশাচর (Nocturnal), তাই এরা রাত্রে খাবারের খোঁজে বের হয়। এদের খাবারের তালিকায় রয়েছে ইঁদুর, ব্যাঙ, টিকটিকি এবং সেইসব উষ্ণ রক্তবিশিষ্ট ছোট ছোট প্রাণী যাদের দেহে থেকে নির্গত ইনফ্রারেড তরঙ্গ দ্বারা রাতের আঁধারে পাহাড়ি বোড়া শনাক্ত করতে পারে ইত্যাদি। এরা ওভিপোরাস তাই প্রজনন মৌসুমে স্ত্রী সাপ ৬-১৮ টি ডিম পাড়ে এবং ডিমগুলোকে পাহারা দেয়।

এদের বিষে হেমোরেজিন ( Hemorrhagins),  প্রোকোয়াগুলেন্ট (Procoagulant), সাপের বিষ মেটালোপ্রোটিয়েজ (SVMP), সাপের বিষ সেরিন প্রোটিয়েজ (SVSP), ফসফোলাইপেজ এ (Phospholipase A) প্রভৃতি হেমোটক্সিন বিষ থাকে ,তাই এদের কামড়ে মৃত্যুর ঘঠনার রেকর্ড আছে (ভারতে)। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে এটির উপস্থিতি সুস্পষ্ট, পাশাপাশি সিলেটের পাহাড়ি অঞ্চলেও থাকার সম্ভাবনা প্রবল। 

মাউন্টেন পিটভাইপারেরকে বর্তমানে দুটি প্রজাতিতে ভাগ করা হয়েছে - Himayalayan Mountain Pitviper ( Ovophis monticola) ও Taiwan Mountain Pitviper (Ovophis makazayazaya, তাইওয়ানে পাওয়া যায়) 

এই দুটি প্রজাতি ছাড়াও Ovophis monticola এর বহু উপপ্রজাতি আছে। যেমন : 

Ovophis monticola convictus (Indo-malayan mountain pitviper) : ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ার পশ্চিম অংশে পাওয়া যায়। 

Ovophis monticola meridionalis : কম্বোডিয়া, লাওস, পশ্চিম মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম প্রভৃতি দেশে পাওয়া যায়। 

Ovophis monticola monticola (Mountain pitviper) : বাংলাদেশ, ভারত (অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, মিজোরাম, মণিপুর প্রভৃতি), চীন (সিচুয়ান প্রদেশ, তিব্বত প্রভৃতি) ইত্যাদি দেশে পাওয়া যায়। 

Ovophis monticola orientalis ( Oriental mountain pitviper) : চীন ও হংকংয়ে প্রাপ্ত। 

Ovophis monticola zayuensis (Zayuan mountain pitviper) : চীন ও তিব্বতে প্রাপ্ত। 

Ovophis monticola zhaokentangi : চীনে পাওয়া যায়। 

Post a Comment

0 Comments