Advertisement

হলদে-পেট সামুদ্রিক সাপ বা রঙ্গিলা সামুদ্রিক সাপ (Yellow-bellied Sea Snake)

 হলদে-পেট সামুদ্রিক সাপ বা রঙ্গিলা সামুদ্রিক সাপ হচ্ছে Hydrophiinae উপগোত্রের একটি তীব্র নিউরোটক্সিন বিষধর সামুদ্রিক সাপ। এর ইংরেজি নাম Yellow-bellied Sea Snake এবং বৈজ্ঞানিক নাম Hydrophis platurus এটিই বাংলাদেশের সবচেয়ে বিষধর সাপ। 

ইয়োলো বেলিড সী স্নেক পুরো পৃথিবীব্যপী বিস্তৃত একটি সামুদ্রিক প্রজাতির সাপ, আটলান্টিক মহাসাগর ব্যতিত পৃথিবীর প্রায় সব ট্রপিক্যাল সাগর/ মহাসাগরে (আরব সাগর, ভারত মহাসাগর, প্রশান্ত মহাসাগর ইত্যাদি) এদেরকে পাওয়া যায়। 

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল, কোস্টারিকা, ক্যালিফোর্নিয়া, হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড (নিউজিল্যান্ডে এটিকে স্থানীয় সাপ হিসেবে ধরা হয় এবং এটি আইন দ্বারা সংরক্ষিত) প্রভৃতি সব অঞ্চলে এটি বিস্তৃত। 

এটিই একমাত্র সী স্নেক যাকে ক্যারাবিয়ান সাগরে পাওয়া গেছে।

আফ্রিকা মহাদেশের পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চল এবং দ্বীপগুলোতে (মাদাগাস্কার, মোজাম্বিক, ডিজিবুতি, সোমালিয়া, তানজানিয়া, ইরিত্রিয়া ইত্যাদি) এই প্রজাতির সাপ পাওয়া যায়। 



ছবি : Yellow-bellied Sea Snake (Source : Wikipedia) 

হলদে-পেট সামুদ্রিক সাপের দেহ পার্শ্বীয়ভাবে সংকুচিত, মাথা লম্বাকৃতির। দেহের উপরের অংশ কালো বা নীলাভ-বাদামী এবং নিচের অংশ হলুদ। লেজ প্যাডেল আকৃতির এবং হলদে রঙের যার মধ্যে কালো দাগ থাকে। এদের লেজ দেহ থেকে পৃথকযোগ্য। এদের দেহের বর্ণবৈচিত্র্য এদেরকে অন্যান্য সামুদ্রিক সাপ থেকে আলাদাভাবে উপস্থাপন করে।

পুরুষ সাপরা স্ত্রী সাপদের থেকে আকৃতিতে ছোট হয়। পুরুষদের দেহের দৈর্ঘ্য সাধারণত ৩০ ইঞ্চির মতো আর স্ত্রীদের প্রায় ৪০ ইঞ্চির মতো হয় এবং সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য সাধারণত ১ মিটারের মতো হয়ে থাকে। 

এদের শরীর পার্শ্বীয়ভাবে সরু আকৃতির হওয়ায় এবং লেজ নৌকার বৈঠার মতো কিংবা প্যাডেল আকৃতির হওয়ায় সমুদ্রে এরা দানবীয় গতিতে (প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১মিটার দূরত্ব) ছুটে বেড়ায়। জলে এতো দ্রুত গতিতে ছুটতে পারলেও মাটিতে অসহায়ের মতো থাকে! (খুবই ধীরগতিতে চলাফেরা করে)। এমন ধীরগতির জন্য দায়ী মূলত এদের পেটের আইশ। এই আইশ তাদেরকে পানিতে খুব দ্রুত চলতে সাহায্য করলেও মাটিতে প্রয়োজনীয় ঘর্ষণ সৃষ্টি করতে পারে না, যার ফলে এরা মাটিতে খুবই দূর্বলভাবে চলাফেরা করে এবং এজন্য এরা অন্য শিকারি প্রাণীর দ্বারা আক্রমণের শিকারও হতে পারে।

এদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো যে এরা সামনে এবং পিছনে, উভয়দিকে চলতে পারে, যা তাদের এক অনন্য বৈশিষ্ট্যও বলা যায়। এরা এদের জীবনকালে প্রায় ৯০% সময়েই পানির নিচে কাটায়।

রঙ্গিলা সামুদ্রিক সাপের অন্যান্য সী স্নেকদের মতো নিম্ন চোয়ালের দিকে একটি বিশেষ লবণ গ্রন্থি থাকে যা দ্বারা আশেপাশের নোনা পানি থেকে লবণকে ফিল্টার করা যায়, কিন্তু এটা এরা ব্যবহার করে না।

এরা মাংসাশী (Carnivores) প্রাণী এবং শুধুমাত্র মাছ খেয়ে থাকে।

হলুদ-পেট সামুদ্রিক সাপ উষ্ণ পানিতে প্রজনন করে। ৫-৬ মাস গ্যাস্টেশন পিরিয়ড শেষে স্ত্রী সাপ ২-৬টি বাচ্চা প্রসব করে (Ovoviviparous)।

ইয়েলো বেলিড সী স্নেক সাপ বিষের দিক দিয়ে পৃথিবীর চতুর্থ বিষধর সাপ এবং বাংলাদেশে বসবাসকারী সবচেয়ে মারাত্মক বিষধর সাপ। এটির বিষে রয়েছে উচ্চ মাত্রার নিউরোটক্সিন এবং সাথে আরো দুই প্রকারের আইসোটক্সিন। এদের বিষের Subcutaneous Lethal Dose 50 (SLD50 0.067 মিলিগ্রাম /কেজি) এবং প্রতিটি বাইটে ১-৪ মিলিগ্রাম বিষ ঢালে।

এদের বিষ মায়োগ্লোবিনিউরিয়ার সাথে কঙ্কালপেশিকে ধ্বংস করে, নিউরোমাস্কুলার প্যারালাইসিস ঘঠায় অথবা সরাসরি বৃক্ককে বিকল করে মৃত্যু ঘঠায়।

অনেকের ভূল ধারণা আছে যে এর এন্টি-ভেনম নেই, আসলে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে অবস্থিত কমনওয়েলথ সিরাম লিমিটেড একটি এন্টি-ভেনম ডেভেলপ করছে (যেটি প্রধানত বড়শিনাক সামুদ্রিক সাপের জন্য) যেটিকে রঙ্গিলা সামুদ্রিক সাপের জন্যেও ব্যবহার করা যাবে। তাছাড়া এদের বাইটে পলিভ্যালেন্ট এন্টি-ভেনমও ব্যবহার করা যায়। তবে বাংলাদেশে কিংবা অনান্য দেশে এদের কামড়ে মৃত্যুর খবর এখনো পাওয়া যায়নি (এই ইনফরমেশনটা ১০০% নিশ্চিত না)!।


শ্রেণীবিন্যাস (Taxonomy) 

KINGDOM : Animalia

PHYLUM : Chordata

SUBPHYLUM : Vertebrata

CLASS : Reptilia

ORDER : Squamata

FAMILY : Elapidae

Sub-Family : Hydrophiinae

GENUS : Hydrophis 

SPECIES : Hydrophis platurus


তথ্যসূত্র-১

তথ্যসূত্র-২

Post a Comment

0 Comments