ক্রেইট হচ্ছে এলাপিডি পরিবারভুক্ত এবং Bungarus গণের তীব্র নিউরোটক্সিন বিষধর একটি স্থলজ সাপের গোষ্ঠী। এদের সবাই এশিয়া মহাদেশেই এন্ডেমিক, অর্থাৎ এশিয়া মহাদেশের বাইরে আর কোথাও ক্রেইটকে পাওয়া যায় না।
ক্রেইট সাপদেরকে স্থলে বসবাসকারী সবচেয়ে তীব্র বিষধর সাপ হিসেবেই গণ্য করা হয় এবং প্রতি বছর মানবগোষ্ঠীর বিরাট একটা অংশের জীবনের ইতি ঘঠে এই ক্রেইটদের ছোবলেই।
![]() |
ছবি : লাল-মাথা ক্রেইট (সোর্স: Joremy anak Tony) |
প্রায় সব ক্রেইট সাপের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন : এরা সবাই আলোর প্রতি তীব্র সংবেদনশীল, এমনকি পূর্ণিমা রজনীর চাঁদের আলোর প্রতিও সংবেদনশীলতা দেখায়। কখনো যদি কোনো মানুষ তাদের উপরে টর্চ লাইটের আলো ফেলে, তখন লজ্জায় / ভয়ে দেহকে কুন্ডলী পাকিয়ে তার ভিতরে মুখ লুকিয়ে নেয়।
এদের সবাই সাপখেকো (Ophiopagious) হিসেবেই অধিক সমাদৃত। নির্বিষ কিংবা বিষধর, সব ধরনের সাপকেই খেয়ে ফেলে, এমনকি নিজেদের স্বপ্রজাতির আকারে ছোট সাপদেরকেও ছাড় দেয়না। তবে গিরগিটি, টিকটিকি, ব্যাঙ, ইঁদুর প্রভৃতিও খেয়ে থাকে।
এরা যদিও নিরীহ ও ডরালু স্বভাবের সাপ, কিন্তু বিপদে পড়লে কামড় বসিয়ে দেবে!
এশিয়া মহাদেশের ট্রপিক্যাল ও সাব-ট্রপিক্যাল অঞ্চলের বনগুলোর মেঝেতে (Forest Floor) এদের দেখা মেলে। এই গোষ্ঠীর সাপদেরকে শুধুমাত্র ইরান ও চীন ব্যতিত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাইরে আর কোথাও পাওয়া যায়না। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল প্রভৃতি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে, এবং ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, চীন, ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া প্রভৃতি দেশে জীবভৌগলিক সীমানা বিস্তৃত।
বেশিরভাগ সদস্যদের গায়েই ডোরাকাটা নকশা করা থাকে। লেজসহ সাধারণত ১ থেকে ১.৫ মিটার লম্বা হয়ে থাকে, তবে শঙ্খিনী (Banded Krait) ৬ ফুটের চাইতেও বেশি লম্বা হয় এবং ক্রেইটদের মধ্যে আকারে সবচেয়ে বড়।
সব ক্রেইটদের দেহের পীঠ বরাবর স্পষ্ট ষড়ভুজাকৃতির (Hexagonal) তুলনামূলকভাবে বড় আকারের আঁইশের সারি থাকে। মাথা সরু আকৃতির হয়, চোখ গোলাকার ও ছোট, চোখের মণি কালো। সবাই রাতের বেলায় সক্রিয় হয় (Nocturnal), এবং মানুষের সাথে সাধারণত সংঘাত ঘঠে রাতেই। এদের সবাই ডিম পেড়ে বাচ্চা দেয় (Oviparous), ফরেস্ট ফ্লোরে পড়ে থাকা পাতার স্তুপেই বেশিরভাগ সময় ডিম পাড়ে।
বেশিরভাগ ক্রেইটের কামড়ের ঘঠনা ঘঠে রাতের বেলায়, কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, ক্রেইট সাপ কামড়ালে সে স্থানে প্রথমে কোনো ব্যথা থাকেনা, যেজন্য বোঝাই যায়না যে সাপে কামড়িয়েছিল কিনা। অনেকসময় মশার কামড়ের মতো দাগ দেখা যেতে পারে, বিষক্রিয়ার চূড়ান্ত পর্যায়ে রোগী বুঝতে পারেন তাকে সাপে কামড়িয়েছিল। আবার ক্রেইটদের কামড়ে বিষক্রিয়ার লক্ষণ প্রকাশ পেলে সে রোগীকে বাঁচানোটা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। আরো দুঃখের বিষয়, এরা প্রায় শতভাগ কার্যকরী বাইট দেয়, অর্থাৎ প্রায় সব কামড়েই বিষ ঢালে (ড্রাই বাইটের হার শূন্যের কাছাকাছি)।
এদের বিষ প্রি-সিন্যাপটিক নিউরোটক্সিন ও বুঙ্গারোটক্সিন ধারণ করে। কামড়ানোর ৬-১২ ঘন্টা পরে (কিছুক্ষেত্রে আরো আগে) বেশিরভাগ পেশেন্টের মৃত্যু হয় প্যারালাইসিস কিংবা দমবন্ধ হয়ে / শ্বাসযন্ত্রের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে। অনেকসময় হাসপাতালে নিয়ে গেলেও রোগী কোমায় চলে যান কিংবা ব্রেন ডেথ হয়ে যান (ব্রেন ডেথ : বেঁচে থাকেন কিন্তু তার আর কোনোদিনও জ্ঞান ফিরবে না)।
এখন পর্যন্ত সাপ বিশেষজ্ঞরা পৃথিবীতে ১৮ টি ক্রেইটের প্রজাতির বর্ণনা দিয়েছেন যারমধ্যে বাংলাদেশে মোট ৫ প্রজাতির বসবাস। এগুলো হলো শঙ্খিনী (Banded Krait, Bungarus fasciatus), পাতি কালাচ (Common Krait, Bungarus caeruleus), ওয়ালের কালাচ (Wall's Krait, Bungarus walli), বড় কৃষ্ণকালাচ (Greater Black Krait, Bungarus niger) ও ছোট কৃষ্ণকালাচ (Lesser Black Krait, Bungarus lividus).

0 Comments