Advertisement

চন্দ্রবোড়া নিয়ে কিছু ভূল ধারণা (Some Mistaken Beliefs about Russell’s Viper)

 ২০২৪ সালে বাংলাদেশের কিছু গণমাধ্যম হঠাৎ রাসেল'স ভাইপার নিয়ে তীব্র সক্রিয় হয়ে উঠে। মিডিয়ার প্রসার-প্রচারের জন্য পুরো বাংলাদেশে রাসেল'স ভাইপার আতংক ছড়িয়ে পড়ে, শহর থেকে গ্রামে, মানুষের মুখে মুখে রাসেল'স ভাইপারের নামটি ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলস্বরূপ মানুষের হাতে চারিদিকে নির্বিষ সাপগুলো গণহারে মারা পড়তে থাকে। তবে, দুঃখের ব্যাপার হলো রাসেল'স ভাইপার সন্দেহে সবচেয়ে বেশি মারা পড়ার তালিকায় ছিলো বার্মিজ অজগর (Burmese Python), ঘরগিন্নি বা ঘরচিতি (Common Wolf Snake), তুতুর বা বালুবোড়া (Russell’s Sand Boa), কুকুরমুখো নোনাবোড়া (Dog-faced Water Snake)। এমনকি জলঢোড়াঁ (Checkered Keelback) পর্যন্ত রেহাই পায়নি। 

চারিদিকে সাপগুলোর এমন নির্মম গণহত্যা দেখে দেশের ইকোসিস্টেমগুলোতে বড় একটা সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা ছিলো এবং এর থেকে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশের সব সাপ উদ্ধারকারী সংগঠনগুলো যৌথভাবে প্রচারণায় নামে। দেশের গণমাধ্যমগুলো কীসের জন্য এমনটা করেছিলে তার রহস্য এখনো অজানা।


ছবি : চন্দ্রবোড়া (Vivek Sharma)

সেই মুহুর্তে দেশের প্রথম সারির গণমাধ্যমগুলো মানুষের মনে নানান কুসংস্কার গেঁথে দিয়েছিলো, যেগুলো এখনও বাংলাদেশে বিরাজমান আছে।

  • সবাই এটাকে " রাসেল ভাইপার " বলেছিলো, অথচ সঠিক উচ্চারণটা হবে " রাসেল'স ভাইপার অথবা চন্দ্রবোড়া "
  • মানুষ মনে করেছিলো রাসেল'স ভাইপার পৃথিবীর সবচেয়ে বিষধর সাপ, কিন্তু বিষের তীব্রতার দিক দিয়ে এরা পৃথিবীর ৩৩তম বিষধর আর বাংলাদেশের জন্য ৭ম বিষধর সাপ (গ্লোবাল SCLD এর মান অনুযায়ী)। পৃথিবীর সবচেয়ে বিষধর সাপ অস্ট্রেলিয়ার ইনল্যান্ড তাইপান। বাংলাদেশের দুটি গোখরা, আর পাঁচটি ক্রেইটের প্রজাতিগুলো রাসেল'স ভাইপারের থেকেও অনেক বেশি বিষধর।
  • উগ্রতার দিক দিয়েও এরা Black Mamba, Saw-scaled Viper প্রভৃতি থেকে পিছিয়ে আছে, আর পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিষদাঁতের অধিকারী চন্দ্রবোড়া নয়, বরং আফ্রিকার সাব-সাহারান অঞ্চলে বসবাসকারী গ্যাবন ভাইপারের। কিন্তু, গণমাধ্যমগুলো এমনও করেছিলো যে, রাসেল'স ভাইপারের সাক্ষাৎ মানে নিশ্চিত মৃত্যু। 
  • অনেকে দাবী করেছিলেন যে ভারত থেকে বন্যার পানিতে এটি বাংলাদেশে ঢুকেছে। আসলে এটা ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢুকেনি, বরং এটি বাংলাদেশের স্থানীয় সাপ (Native species), যুগযুগ ধরে এটি এখানকার স্থানীয় বাসিন্দা। তবে, তাদের বিস্তৃতি ও সংখ্যা বাড়ছে।
  • কোনো সাপই মানুষকে ইচ্ছাকৃতভাবে আক্রমণ করেনা, মানুষকে এড়িয়ে চলতেই ভালোবাসে সবাই। তবে, চন্দ্রবোড়া, ব্ল্যাক মাম্বা, র‍্যাটল স্নেক প্রভৃতি মানুষকে দেখলে ভয় পেয়ে যায় এবং নিজেদের জন্য সম্ভাব্য হুমকি মনে করে ছোবল মারে। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি দূর্ঘটনা ঘঠে যখন ধানের জমিতে কৃষকরা কাজ করতে যান, সেখানে অবস্থান করা রাসেল'স ভাইপারের সাথে তাদের সাক্ষাৎ হয়।
  • আর রাসেল'স ভাইপারের কামড়ের চিকিৎসা হিসেবে বাংলাদেশেই পলিভ্যান্ট এন্টি-ভেনম আছে, যথাসময়ে চিকিৎসা নিলে এবং আল্লাহর কৃপা থাকলে হয়তো বেঁচে যাবেন।

এখানে আরেকটা বিষয় উল্লেখ করা ভালো যে, বাংলাদেশের অনেক রোগী রাসেল'স ভাইপারের কামড় খেয়ে এন্টি-ভেনম নেয়ার পরেও মারা গেছেন কিংবা সুস্থ হওয়ার মাসখানেক পরেও মৃত্যু হয়েছে অনেকের। এর মূল কারণ হচ্ছে এন্টি-ভেনমের কার্যকারিতা। 

আসলে সাপের বিষের উপাদান কিংবা তীব্রতা তাদের খাদ্যভ্যাস, স্থান, আবহাওয়া প্রভৃতি বিষয়াদির উপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। যেমন : বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের পদ্ম গোখরার সাথে উত্তরবঙ্গের পদ্ম গোখরার বিষের অনেক অমিল খুঁজে পাওয়া যাবে। তাই কোনো সাপের প্রতিষেধক হিসেবে সেই অঞ্চলের সাপের বিষ থেকে উৎপন্ন এন্টি-ভেনমই শতভাগ কার্যকরী হবে।

বাংলাদেশের রাসেল'স ভাইপারের এন্টি-ভেনম দেশে উৎপন্ন না করে ভারত থেকে আমদানি করা হয়। ভারতে উৎপন্ন এন্টি-ভেনম বাংলাদেশের চন্দ্রবোড়ার বিষের বিরুদ্ধে শতভাগ কার্যকরী না হওয়ায় এইরকম ঘঠনাগুলো ঘটে থাকে। তবে, আমরা আশাবাদী চট্টগ্রাম থেকে খুব শীগ্রই আমাদের জন্য কোনো সুসংবাদ আসবে।

Post a Comment

0 Comments