Advertisement

চলো ক্রেইটদের রাজ্যে ঘুরে আসি (Let's Explore the Kingdom of Kraits) (২য় পর্ব)

পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত মোট ১৮ প্রজাতির ক্রেইট সাপ আবিস্কৃত হয়েছে, এইসব স্থলজ ক্রেইটদের সাথে সামুদ্রিক ক্রেইটদের যোগ করলে তালিকাটি ৩০ এর কাছাকাছি চলে আসে, যদিও সামুদ্রিক ক্রেইটগুলো স্থলে বসবাসরত কালাচদের থেকে সম্পূর্ন ভিন্ন। 


ছবি : শঙ্খিনী, Banded Krait (PC: Thai National Park)

স্থলজ ক্রেইটগুলো হলো - 

আন্দামান কালাচ (South Andaman Krait, Bungarus andamanensis) : ভারত মহাসাগরে অবস্থিত ভারতের মালিকানাধীন আন্দামান দ্বীপের একটি অংশে এটি এন্ডেমিক, এই দ্বীপের বাইরে এই প্রজাতির কোনো অস্তিত্ব নেই।

পাহাড়ি কালাচ (North-eastern Hill Krait, Bungarus bungaroides) : মায়ানমার, নেপাল, ভিয়েতনাম ও ভারতে ( আসাম, সিকিম, মেঘালয় প্রভৃতি জায়গা) এটিকে পাওয়া যায়। এখানে বলে রাখা ভালো, বাংলাদেশের সিলেটের পাহাড়ি অঞ্চলে এটিকে পাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং আমাদের চোখকান খোলা রাখতে হবে।

নীল কালাচ (Blue Krait, Bungarus candidus) : ইন্দোচিন অঞ্চলের (কম্বোডিয়া, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম ও লাওস) বিষধর কালাচ। বিষে ত্রি-ফিঙ্গার নিউরোটক্সিন থাকে এবং কামড়ে মৃত্যুর হার ৬০-৭০% হতে পারে।

সীলন কালাচ (Ceylon Krait, Bungarus ceylonicus) : এটিকে শুধুমাত্র শ্রীলংকার কয়েকটি আর্দ্র অঞ্চলে পাওয়া যায়। আকারে তুলনামূলক ছোট সাপ, প্রায় ৭৫-৯০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়।

লালমাথার কালাচ (Red-headed Krait, Bungarus flaviceps) : ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশের বাসিন্দা। মাথা লাল ও দেহ কালো হওয়ায় কালাচদের মধ্যে অন্যতম সুন্দর ও আকর্ষনীয় দেখায়। মানববসতি থেকে বহুদূরে পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে বসবাস করে, এজন্য বাইটের ঘটনা বিরল।

বার্মিজ কালাচ (Burmese Krait, Bungarus magnimaculatus) : বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষা মিয়ানমারের কিছু অঞ্চলে এটিকে পাওয়া যায়। সুতরাং আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে এটিকে পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

চাইনিজ কালাচ (Chinese Krait/ Many-banded Krait, Bungarus multicinctus) : মায়ানমার, ভিয়েতনাম, লাওস, থাইল্যান্ড, চীন প্রভৃতিতে জীবভৌগলিক সীমানা বিস্তৃত। গ্লোবাল SCLD এর মান অনুযায়ী পৃথিবীর সবচেয়ে বিষধর কালাচ।

সিন্ধু কালাচ (Sind Krait, Bungarus sindanus) : ভারত (উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের গুজরাট, পাঞ্জাব, মহারাষ্ট্র ও রাজস্থান), পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের বাসিন্দা। পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের নামানুসারে একে সিন্ধু ক্রেইট বলা হয়।

লাল-নদীর কালাচ ( Red River Krait, Bungarus slowinskii) : ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডে বসবাস করে। বিখ্যাত মার্কিন হার্পেটোলজিস্ট Joseph Bruno Slowinski এর সম্মানার্থে এই প্রজাতির নাম করা হয়েছে Slowinski। 

সুজানের কালাচ (Suzhen's Krait, Bungarus suzhenae) : ২০২১ সালে এই ক্রেইটের প্রজাতির নামকরণ করা হয়, চীন ও মিয়ানমারের কয়েকটি প্রদেশে এটি এন্ডেমিক। এটির নাম এসেছে চীনা উপকথার দেবী Bai Suzhen এর নাম থেকে যিনি ঔষধ, আরোগ্য ও প্রকৃত ভালোবাসার দেবী। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকার একজন সরীসৃপবিদ, Joseph Bruno Slowinski মিয়ানমারের একটি অঞ্চলে সরীসৃপ নিয়ে গবেষণার জন্য উনার টিমের সাথে কাজ করছিলেন, এক পর্যায়ে তিনি একটি ক্রেইটের কামড় খান, তখন সবাই ধরে নিয়েছিলো যে তিনি Many-banded Krait (Bungarus multicinctus) এর কামড় খেয়েছেন, কিন্তু পর্যাপ্ত চিকিৎসা ও মেডিকেল সাপোর্টের অভাবে কামড়ের ২৯ ঘন্টা পর তার মৃত্যু হয়। আসলে তখন ঐ হার্পেটোলজিস্টকে Suzhen's Krait কামড়িয়েছিলো।

Bungarus wanghaotingi এবং Bungarus sagittatus সম্পর্কে ইনফরমেশনের প্রচুর ঘাটতি আছে, তাই তাদের সম্পর্কে কিছু বলা যাচ্ছে না।


সামুদ্রিক ক্রেইট

সামুদ্রিক (Coral Reef Snakes) সাপগুলো সাধারণত দুটি উপপরিবারে বিভক্ত, Hydrophiinae যাদেরকে Sea Snakes বলা হয় এবং Laticaudinae যাদেরকে Sea Krait বলা হয়।

এইসব Sea Krait স্থলে বসবাসকারী ক্রেইটদের থেকে ভিন্ন। তাদের লেজ সাতারের জন্য বিশেষভাবে অভিযোজিত (Paddle-liked tail)। তবে এরা অন্যান্য সামুদ্রিক সাপের মতো নয়, স্থলেও মোটামুটি চলাফেরা করতে পারে (Semi-aquatic)। পাশাপাশি শক্তিশালী নিউরোটক্সিন ও মায়োটক্সিন বিষও ধারণ করে। 

পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত মোট ৮ প্রজাতির সামুদ্রিক ক্রেইটের অস্ত্বিত্ব পাওয়া গেছে। যেগুলো Laticaudus গণের অন্তর্ভুক্ত। বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশের জলসীমান্ত এলাকায় দুই প্রজাতির সামুদ্রিক ক্রেইট আছে। বলয়যুক্ত উভচর সাপ (Common Sea Krait, Laticauda laticaudata) ও হলুদমুখো উভচর সাপ (Banded Sea Krait, Laticauda colubrina)।

Post a Comment

0 Comments