Advertisement

ওয়ালের কালাচ বা ওয়াল'স ক্রেইট (Wall's Krait)

ওয়ালের কালাচ (Wall's krait) হচ্ছে এলাপিডি পরিবারভূক্ত একটি মাঝারি আকৃতির এবং তীব্র  নিউরোটক্সিন বিষ সমৃদ্ধ সাপ যা দক্ষিণ এশিয়ায় এন্ডেমিক। বৃটিশ সরীসৃপ বিজ্ঞানী ফ্রাঙ্ক ওয়াল এর নামানুসারে একে ওয়াল'স ক্রেইট বলা হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Bungarus walli। এদেরকে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত,পাকিস্তান এবং নেপালে পাওয়া যায়।

ওয়াল'সের কালাচ সাধারণত ১ থেকে ১.৩ মিটার লম্বা হয় (তবে সর্বোচ্চ ১.৬ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে)। এদের দেহ সরু আকৃতির। পুরো দেহ কালো অথবা বাদামী-কালো রঙের এবং পেট সাদা। পুরো দেহে অসংখ্য সাদা ও কালো রঙের খুবই ছোট ছোট পট্রি থাকে এবং এই ব্যান্ডগুলো পাতি কালাচের মতো জোড়ায় জোড়ায় অবস্থান করেনা, বরং একই সাথে অবস্থান করে, অর্থাৎ ব্যান্ডের অনুপাত ১:১ থাকে যেখানে পাতি কালাচের ২:২ আনুপাতিক হারে বিদ্যমান । ওয়াল'স কালাচের ব্যান্ডগুলো ঘাড় থেকে শুরু হয়ে লেজে গিয়ে শেষ হয়। ভারতীয় উপমহাদেশের সব ক্রেইটদের থেকে ওয়াল'স ক্রেইটদের সবচেয়ে বেশি ব্যান্ড থাকে এবং ব্যান্ডের এই অনন্য বৈশিষ্ট্যর জন্য এদেরকে খুব সহজেই পাতি কালাচের (Common Krait) থেকে পৃথক করা যায়। এদের মাথা অনেকটা ডিম্বাকৃতির, ঘাড়ের চেয়ে কিছুটা চওড়া। চোখ ছোট এবং কালো বর্ণের। এরা ওভিপোরাস, তাই প্রজনন মৌসুমে স্ত্রী সাপ ডিম পাড়ে।


ছবি : ওয়াল'সের কালাচ ( PC : iNaturalist) 

ওয়াল'সের কেউটে নিশাচর (Nocturnal) অর্থাৎ রাতে খাবারের খোঁজে বের। এদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে সাপ, ইঁদুর, ব্যাঙ, টিকটিকি, মাছ, ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী প্রভৃতি। এদেরকে প্রধানত মুক্ত বন, কৃষি জমি, ঘাসে আবৃত জমি (কিছুটা ভেজা জায়গাগুলোতে) এমনকি লোকালয়েও পাওয়া যায়। এদেরকে বিরক্ত করা হলে  কামড় বসিয়ে দিতে পারে। তবে এরা লাজুক প্রকৃতির সাপ, বিরক্ত হলে দেহ কুন্ডলী পাকিয়ে ফেলে এবং দেহের নিচে মাথা লুকিয়ে রাখে।

ওয়ালের কালাচ একটি নিউরোটক্সিন বিষ বহনকারী সাপ, তাই এদের কামড়ে স্নায়ুতন্ত্রে আক্রমণ ঘঠে। এর বিষক্রিয়ার লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে - মাথাব্যথা (Headache), বমি বমি ভাব(Nausea), বমি (Vomiting), ডায়রিয়া (Diarrhea), পেট ব্যাথা (abdominal pain), মাথাঘোরা (Dizziness), খিচুনি ইত্যাদি।

বাংলাদেশের খুলনা, দিনাজপুর, রংপুর, ময়মনসিংহ প্রভৃতি জায়গায় পাওয়া যায়। বৃহত্তর সিলেট ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে কোনো রেকর্ড নেই, তবে হবিগঞ্জের পাশেই কিশোরগঞ্জে ভালো পরিমাণে পাওয়া যায়। 

বাংলাদেশে এদের উপস্থিতি যথেষ্ট বেশি, তাই কামড়ের ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। মনে রাখা উচিত, এইসব তীব্র বিষধর সাপের কামড়ের একমাত্র প্রতিষেধক এন্টি-ভেনম, তাই কেউ এদের দ্বারা দংশিত হলে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিতে হবে, ওঝার কাছে গিয়ে জীবন নষ্ট করা যাবে না। 

Post a Comment

0 Comments