Advertisement

প্রাণিজগৎ ও সাপ (Animal Kingdom and Snakes)

 প্রাণিজগৎ (Animal Kingdom) 

প্রাণিজগতকে আমরা সাধারণত তাদের পৃষ্ঠদেশে অবস্থিত স্থিতিস্থাপক, অল্প নমনীয় এবং ছিদ্রযুক্ত টিস্যুর (Notochord) উপস্থিতির উপর ভিত্তি করে দুইভাগে ভাগ করতে পারি। যথা 

১/ অমেরুদণ্ডী (Nonchordate) : এসব প্রাণীর দেহে নটোকর্ড অনুপস্থিত থাকে। যেমন : প্রজাপতি, অক্টোপাস, চিংড়ি, কেঁচো, ফড়িং, মশা ইত্যাদি। 

২/ মেরুদণ্ডী (Chordate) : এসব প্রাণীর জীবন চক্রের কোনো না কোনো দশায় কিংবা সর্বাবস্থায় এই নটোকর্ড উপস্থিত থাকে। উদাহরণ : মানুষ, বানর, পাখি, ব্যাঙ, সাপ ইত্যাদি। 



এই মেরুদণ্ডী প্রাণিদেরকে পরবর্তীতে আরো দুটি সুপার ক্লাসে ভাগ করা হয়েছে, যাদের মধ্যে একটি হলো Gnathostomata. এই অধিশ্রেনিকে পরবর্তীতে আরো সাতটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো -

১/ কন্ড্রিকথিস (Condrichthyes) : এই শ্রেণীতে সব তরুণাস্থিময় মাছগুলো স্থান পেয়েছে। যেমন : হাঙর, স্টিং রে, হাতুড়ি হাঙর প্রভৃতি। 

২/ অ্যাকটিনোপটেরিজি (Actinopterygii) : এটিতে আমাদের জানাশুনা সব অস্থিময় মাছ অন্তর্ভুক্ত। যেমন : মাগুর, কৈ, পাবদা, রুই ইত্যাদি। 

৩/ সার্কোপটেরিজি (Sarcopterygii) : এই শ্রেণীর মাছগুলো খুবই অসাধারণ, এদের পাখনাগুলো পিন্ডাকার, যেন হাত-পা এর মতো। যেমন : লাংফিশ, সিলাকান্থ মাছ ইত্যাদি। 

৪/ উভচর (Apmphibia) : এটিতে অন্তর্ভুক্ত প্রাণীগুলোর জীবনে জলভাগ এবং স্থলভাগ উভয়েই প্রয়োজন। যেমন : ব্যাঙ, স্যালামান্ডার এবং সিসিলিয়ান।

৫/ সরীসৃপ (Reptilia) : এই শ্রেণীর প্রাণিগুলো বুকে ভর দিয়ে চলে এবং অধিকাংশের দুই জোড়া পা থাকে। যেমন : টিকটিকি, গিরগিটি, কুমির, সাপ ইত্যাদি। 

৬/ পাখি (Aves) : এদেরকে তো আমরা সবাই চিনি। দেহ পালকে আবৃত, দু-পা বিশিষ্ট, ডানাযুক্ত প্রাণী। যেমন : দোয়েল, শালিক, মাছরাঙা ইত্যাদি। 

৭/ স্তন্যপায়ী (Mammals) : এই শ্রেণীতে মানুষসহ সকল উন্নত প্রাণিদের অবস্থান, দেহে লোম থাকে এবং বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ায় যেসব প্রাণী তারাই স্তন্যপায়ী। যেমন : বানর, ডলফিন, বাদুর, মানুষ ইত্যাদি।  

এখন এই সাতটি শ্রেণীর মধ্যে পঞ্চম শ্রেণী অর্থাৎ সরীসৃপদের নিয়ে আমাদের আলোচনা সীমাবদ্ধ থাকবে। এই রেপ্টিলিয়া শ্রেণীকে পরবর্তীতে আরো চারটি বর্গে (Oreder) ভাগ করা হয়েছে। যথা : Testudines (কচ্ছপ, কাছিম প্রভৃতি), Squamata ( টিকটিকি, গিরগিটি, সাপ প্রভৃতি), Crocodylia (কুমির, গরিয়াল প্রভৃতি), Rhynchocephalia (স্ফেনডন পানক্টাম বা টুয়েটারা - নিউজিল্যান্ডের একটি দ্বীপে বসবাসকারী এক প্রকার সরীসৃপ)। 

এই হলো খুব সংক্ষিপ্তাকারে সর্প জগতকে বুঝার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। 


সাপ (Snake)

সাপ হচ্ছে কর্ডাটা পর্বের রেপটিলিয়া শ্রেণীর স্কোয়ামাটা বর্গের বুকে ভর দিয়ে চলা, শীতল রক্তবিশিষ্ট, পা-বিহীন, সরু আকৃতির, চোখের পাতাবিহীন, মাংসাশী প্রাণী। আমরা সাপকে তাদের বিষ এবং অনেক মানুষের মৃত্যুর কারন হিসেবেই চিনে থাকি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীর অধিকাংশ সাপই নির্বিষ। 

পাহাড় -পর্বত, বন-জঙ্গল, নদীনালা, খাল-বিল, সাগর-মহাসাগর, লোকালয়, মরুভূমি কোথায় নেই সাপের অস্তিত্ব!। সূদুর দক্ষিণ আমেরিকা, উত্তর আমেরিকা, এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা, ওশেনিয়াসহ পৃথিবীর ছয়টি মহাদেশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সাপের বিভিন্ন প্রজাতি (অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে সাপ নেই!)। তবে আশ্চর্যজনকভাবে আয়ারল্যান্ড, আইসল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ডের মূল ভূখণ্ডে সাপ নেই!। 

পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি মানবসভ্যতার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে সাপের নাম। এটি শুধু একটি প্রাণি গোষ্ঠীর নাম নয়, বরং এর সাথে সংশ্লিষ্ট রয়েছে ব্যক্তি-সমাজ-রাষ্ট্র -ধর্ম প্রভৃতি বিষয়াদি। সাহিত্য-কবিতায়ও সাপের উল্লেখ যথেষ্ট পরিমাণে আছে।

আমাদের সামনে সাপ নামক শব্দটা ভেসে আসলেই আমরা ভয়ংকর বা খারাপ কিছু হিসেবে ধরে নেই , কিন্তু সাপ যে আমাদের অস্তিত্ব এবং পরিবেশের জন্য কতটা জরুরি তা আমাদের জানার বাহিরেই থেকে যায়।

 The Reptile Database এর তথ্যমতে এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে প্রায় ৪১০৮টি সাপের প্রজাতি রয়েছে, যেগুলো ১৫টি পরিবারের প্রায় ৫২০টি গণের অন্তর্ভুক্ত । এই বৈচিত্র্যময় সাপের প্রজাতিগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই নির্বিষ, এবং সামান্য একটি অংশ বিষধর। আবার বিষধর প্রজাতিগুলোর বেশিরভাগই সামুদ্রিক সাপ, যেগুলো সচরাচর মানুষের সংস্পর্শ থেকে বহুদূরে থাকে। 

Post a Comment

0 Comments