কড়ি কাইট্রা হচ্ছে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি প্রাপ্ত কাছিমদের মধ্যে একটি। পাশাপাশি এটি বাংলাদেশের অন্যতম একটি সুন্দর প্রজাতির কাছিম। এটির ইংরেজী নাম Indian Roofed Turtle (বৈজ্ঞানিক নাম : Pangshura tecta) এবং Geoemydidae পরিবারের একজন সদস্য। এদের পীঠের অংশে (Carapace) অনন্য আকৃতির উপাংশ বিশেষ দেখা যায় বলে " Roofed Turtle " নামকরণ করা হয়েছে।
এরা মূলত জলাভূমির সরীসৃপ। প্রবাহমান ও স্থির (Lentic & Lotic), উভয় ধরনের জলজ বাস্তুতন্ত্রে পাওয়া যায়। বিস্তৃতি রয়েছে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের বড় বড় নদীগুলোতে। সাধারণত গঙ্গা, ব্রম্মপুত্র, মহানন্দা প্রভৃতি নদীগুলোতে পাওয়া যায়, তবে এদের শাখানদী, বিভিন্ন খাল-বিল, পুকুর ও হ্রদেও পাওয়া যেতে পারে, এমনকি হালকা লবনাক্ত জলাভূমিতেও টিকে থাকতে পারে। এরা সর্বভূক প্রাণীদের অন্তর্ভুক্ত (Omnivorous), জলজ গাছগাছালি, কাঁকড়া, শামুক, মৃত প্রাণী প্রভৃতি খেয়ে বেঁচে থাকে।
![]() |
ছবি : কড়ি কাইট্রা (From India Biodiversity Portal) |
পুরুষ কড়ি কাইট্রা স্ত্রী'দের তুলনায় আকারে ছোট হয়ে থাকে (সর্বোচ্চ ২৩ সেন্টিমিটার লম্বা হয়)। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ কাছিমদের লেজ পুরু ও লম্বা হয়ে থাকে। স্ত্রীদের নিচের শেল (যাকে Plastron বলে) কমলা রঙের থাকে এবং পুরুষদেরটা লালচে-বেগুনি যা দেখে এদেরকে পৃথক করা যায়।
অনেকসময় বাংলাদেশের সিলেট ও ভারতের আসাম রাজ্যে প্রাপ্ত সিলেটি কড়ি কাইট্রা (Sylhet Roofed Turtle, Pangshura sylhetensis) এর সাথে এই প্রজাতির কাছিমকে গুলিয়ে ফেলার সম্ভবনা থাকে, কারণ এদেরকে দেখতে হুবহু লাগে। কিন্তু কড়ি কাইট্রাদের পীঠের অংশ (Carapace) এর রঙ গাঢ় বাদামী, গলায় হলদু রঙের পট্রি এবং হাত-পায়ে হলুদ দাগ দাগ থাকে যা সিলেটি কড়ি কাইট্রাতে অনুপস্থিত।
সাধারণত আগস্টের শেষ ও নভেম্বররের মাঝামাঝিতে বাসা বানায়, তবে বাংলাদেশে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ডিম দেখা যায়। বাসাতে ৩-১৪টি ডিম পাড়ে যেগুলো ৭০-১৪০ দিনের মধ্যে ফুটে বাচ্চা বের হয়।
কড়ি কাইট্রাকে IUCN Vulnerable হিসেবে তালিকাভূক্ত করেছে। সাধারণ পেট ট্রেড হিসেবে এর ব্যবহার ব্যাপক হওয়ায় এদের সংখ্যা ক্রমেই কমছে। সুতরাং, এদের সংরক্ষণের ব্যাপারে আমাদেরকে যথেষ্ট সচেতন হতে হবে।

0 Comments