" অ "তে অজগর নাম দিয়ে আমাদের ছোটোবেলায় বর্ণমালা শেখার সূচনা হয়। তাই, " অজগর " নামটার সাথে আমরা ছোটোবেলা থেকেই পরিচিত। আজ আমরা এই অজগর নিয়ে বিস্তারিত জানতে পারবো।
মূলত পাইথনিডি গোত্রের সাপগুলোকে আমরা পাইথন বা অজগর হিসেবেই জানি। এই গোত্রের সবগুলো সাপই নির্বিষ। বর্তমানে ১০ টি গণের প্রায় ৩৯টি প্রজাতি এই গোত্রে অন্তর্ভুক্ত আছে।
এদের সবাই ডিম পাড়ার মাধ্যমে বাচ্চা দেয় ( Oviparous) এবং এই বৈশিষ্ট্যের জন্যই এদেরকে Boidae গোত্র থেকে আলাদা করা হয়েছে ( Boidae গোত্রের সাপেরা Ovoviviparous পদ্ধতিতে বংশবৃদ্ধি করে থাকে)।
![]() |
ছবি : গোলবাহার অজগর (Britannica) |
পাইথনরা Ambush Predator হয়ে থাকে অর্থাৎ শিকারের জন্য ওঁত পেতে বসে থাকে এবং তাদের ক্যাপচারিং রেঞ্জের ভিতরে আসলেই আচমকা আক্রমণ করে শিকারকে ধরাশায়ী করে ফেলে। আরেকজাতের শিকারী হলো Active Predator যারা শিকারের পিছু নিয়ে ধাওয়া করে ধরে।
এদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, এরা শিকারকে পুরো দেহ দিয়ে কয়েলের মতো পেঁচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে (Suffocation / Cardiac Arrest) মেরে খায়।
এদেরকে পৃথিবীর সর্বত্র দেখা যায় না, কেবল এশিয়া, ওশেনিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশে এদের বিস্তৃতি সীমাবদ্ধ। তবে আমেরিকার ফ্লোরিডায় বার্মিজ অজগর একটা আগ্রাসী প্রজাতি (Invasive Species) হিসেবে ছড়িয়ে পড়ছে।
অজগররা গাছ বেয়ে উঠতে খুবই পারদর্শী। এদের লেজও গাছের ডালকে আঁকড়ে থাকার উপযোগী যাকে বলা হয় Prehensile tail. তাছাড়া তারা দক্ষ সাঁতারুও হয়ে থাকে।
অনেক প্রজাতির সাপে, বিশেষকরে পিট ভাইপার, পাইথন, বোয়া প্রভৃতিতে মাথা, চোখ ও নাকের মধ্যবর্তী স্থানে একটি তাপ সংবেদনশীল অঙ্গ থাকে যাকে পিট (Pit) বলা হয়। ইনফ্রারেড তাপ বিকিরণকে (তরঙ্গদৈর্ঘ্য ৫ থেকে ৩০ মাইক্রোমিটার) শনাক্ত করে এই অঙ্গটি সাপকে নিখুঁতভাবে দেখতে সাহায্য করে, এমনকি আলোর অনুপস্থিতিতেও এরা এই পিটের সাহায্য নিখুঁতভাবে শিকারকে আঘাত হানতে পারে। এটিকে তৃতীয় চোখ হিসেবেও বিবেচনা করা যায়। যদিও বোয়া ও পাইথনদের দেহে পিট অঙ্গ আছে, কিন্তু পিট ভাইপারদের মতো এতো আধুনিক নয়।
অজগরদের দাঁত কিন্তু সূক্ষ্ণ ও পিছনের দিকে বাঁকানো থাকে, যাতে শিকার মুখ থেকে পালাতে না পারে। উপরের চোয়ালে চারটি সারি ও নিচের চোয়ালের দুটি সারি থাকে যেখানে প্রায় ১০০টির মতো দাঁত থাকতে পারে।
অজগরদের পায়ূছিদ্র (Cloaca) এর দুইপাশে এদের পিছনের পায়ের চিহ্ন রয়ে গেছে। আমরা জানি সাপের বিবর্তন ঘঠেছে সরীসৃপ থেকে, তাই সরীসৃপদের মতো পিছনের পা দুটির অংশ এখনো দেখা যায় যাকে বলা হয় Pelvic Spurs (স্পার্স)। এটি একটি নিস্ক্রিয় অঙ্গ যা পুরুষ অজগরদের দেহে বেশি স্পষ্ট দেখা যায়। মূলত প্রজননের সময় পুরুষ অজগর এটিকে ব্যবহার করতে পারে।
অজগর সাপ সম্পূর্ন নির্বিষ, কিন্তু এদের দাঁতের গঠন পিছনের দিকে বাঁকানো থাকায় কামড়ে প্রচুর ব্যথা হতে পারে। তাই, কামড় খেলে জায়গাটাকে এন্টি-সেপটিক দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ডাক্তারকে দেখাতে হবে।
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত দুই প্রজাতির অজগর পাওয়া গেছে। প্রথমটি হলো বার্মিজ পাইথন বা দেশি অজগর (Burmese Python) যার বৈজ্ঞানিক নাম Python bivittatus, আর অপরটি হলো গোলবাহার অজগর বা জালি অজগর (Reticulated Python) যার বৈজ্ঞানিক নাম Malayopython reticulatus. দেশি অজগরকে সিলেট ও চট্টগ্রামে চিরসবুজ বন, দেশের মধ্যপ্রান্তের পাতাঝড়া শালবন ও অন্যান্য গ্রামাঞ্চলে পাওয়া যায়। অন্যদিকে গোলবাহার অজগরকে শুধুমাত্র সিলেট ও চট্টগ্রামের গভীর বনে পাওয়া যায়।
![]() |
ছবি : দেশি অজগর (Britannica) |


0 Comments