Advertisement

লোনাপানির কুমির ( Saltwater Crocodile)

লোনাপানির কুমির বা সামুদ্রিক কুমিরের ইংরেজি নাম Saltwater Crocodile এবং বৈজ্ঞানিক নাম Crocodylus porosus। এটি Crocodylidae পরিবারভূক্ত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কুমিরের প্রজাতি। পুরুষ লোনাপানির কুমির সাধারণত ৫-৬ মিটার (১৬-২০ ফুট) পর্যন্ত লম্বা হয়, এবং ওজন ১০০০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। তবে, মেয়ে কুমির তুলনামূলকভাবে ছোট হয়ে থাকে, সাধারনত ২.৫–৩ মিটার।

এদের দেহ শক্তিশালী ও পেশিবহুল, চওড়া মাথা ও দীর্ঘ শক্তিশালী লেজের জন্য জলজ পরিবেশে রীতিমতো এক দাপুটে গোষ্ঠীর সরীসৃপ। মুখে ধারালো দাঁত থাকে (প্রায় ৬০-৭০টি), যা শিকার ধরার জন্য উপযুক্ত।

দেহের রং সাধারণত গাঢ় জলপাই থেকে ধূসরাভ বাদামী হয়ে থাকে। গায়ে থাকে অসংখ্য ছোট ছোট আঁশ ও কঠিন চামড়া। বাচ্চাদের শরীরে থাকে কালো ডোরা বা ফোঁটা।


ছবি : লোনাপানির কুমির ( PC : iNaturalist)

লোনাপানির কুমির সাধারণত লোনা পানি পছন্দ করে, কিন্তু মিঠা পানিতেও স্বাচ্ছন্দে থাকতে পারে। নদীর মোহনা, ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট, উপকূলীয় এলাকা, খাঁড়ি, লবণাক্ত জলাশয়, এমনকি মুক্ত সমুদ্রেও সাঁতার কাটতে দেখা যায়।

এদেরকে সাধারণত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, উত্তর অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, পাপুয়া নিউগিনি, ভারত, শ্রীলংকা, বাংলাদেশ (বিশেষত সুন্দরবনে) প্রভৃতি দেশে পাওয়া যায়। 

প্রজনন মৌসুম সাধারণত বর্ষাকাল। এসময় স্ত্রী কুমির নদীর কিনারায় বা ম্যানগ্রোভে বালুমাটির ঢিবির মধ্যে ডিম পাড়ে। একসাথে ৪০-৬০টি পর্যন্ত ডিম পাড়তে পারে। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে ৮০-৯০ দিন সময় লাগে।

মা কুমির বাচ্চাদের সুরক্ষায় অনেক যত্নবান, ডিম পাড়ার স্থান পাহারা দেয় এবং বাচ্চা ফুটে বের হলে মুখে করে পানিতে নিয়ে যায়।

এদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে মাছ, কচ্ছপ, পাখি, ছোট স্তন্যপায়ী থেকে শুরু করে হরিণ, শূকর, এমনকি জলপথে আসা গবাদিপশুও শিকার করে। কখনো কখনো মানুষও শিকার হতে পারে।

লোনাপানির কুমির সবচেয়ে বেশি লবণ সহ্য করতে পারে — এদের জিভে থাকা বিশেষ লবণ-নিষ্কাশন গ্রন্থি (salt glands) তাদের সমুদ্রের লবনাক্ত পানিতে টিকে থাকতে সহায়তা করে।

Post a Comment

0 Comments